মোঃ আলী ছোবান ,নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
নেত্রকোনায় গত ক’দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্লাবিত নি¤œাঞ্চলেরন পানি কমতে শুরু কমছে। তবে ধীর গতিতে। জেলার প্রধান নদ নদীগুলোর পানি বিপদ সীমার নিচে থাকলেও খালিয়াজুরিতে ধনু নদের পানি এখনো বিপদসীমার অন্তত ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ বারের পানিতে জেলার ১০ উপজেলায় অন্তত ২০ হাজার ২০৪ হেক্টর জমির আমন ফসলী জমি নিমজ্জিত হয়। ৪৬ হাজার সাতশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলা গুলে হচ্ছে, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও নেত্রকোনা সদর।
নেত্রকোনা কৃষি বিভাগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বর্ষা মৌসুমে ১০ উপজেলার মধ্যে আটপাড়া, কেন্দুয়া ও পূর্বধলা ছাড়া বাকি সাতটি উপজেলায় পর পর চারবার বন্যা হয়। এতে আমন বীজতলা, শাক-সবজির ক্ষেত, পুকুরের মাছ, রাস্তা-ঘাট, ঘর বাড়ি, গৃহপালিত পশু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পায়। এতে করে ওই সমস্ত উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানিতে আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পানিতে জেলার ১০ উপজেলায় ২০ হাজার ২০৪ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়। এরমধ্যে কলমাকান্দা উপজেলায় দুই হাজার ২৫০ হেক্টর, দুর্গাপুরে তিন হাজার ৪২০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর, বারহাট্টায় ৬ হাজার হেক্টর, মোহনগঞ্জে দুই হাজার ১২০ হেক্টর, মদনে ১ হাজার ১১০ হেক্টর জমি রয়েছে। পানিতে নিমজ্জিত এ সব ক্ষেতের মধ্যে যে সব কৃষক ব্রি-৫১ ও ব্রি-৫২ ধান রোপন করেছেন তাদের তেমন ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, ব্রি-৫১ ও ব্রি-৫২ ধানের চারা পানির নিচে প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। ধারণা করা যায় এ সব ধানের তেমন ক্ষতি হবে না।
তবে ১৪ হাজার ২০৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬৪ হাজার ৮০০ টন ধান উৎপন্ন হওয়ায় কথা ছিল। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৪৫ হাজার কৃষক পরিবারের এক শত ৬২ কোটি টাকা ক্ষতির হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলায় ৪ লাখ ৩ হাজারের মতো কৃষক পরিবার রয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৩৪ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এরমধ্যে এক লাখ ৩২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়।
তিনি আরো জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা প্রনয়ন করা হচ্ছে। রবিসশ্য তৈরীর জন্য সার বীজ সহ কৃষি উপকরণ প্রনোদনা হিসেবে প্রদান করা হবে। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, জেলায় বৃষ্টিপাত ১০ মিলিমিটার। ধনু নদ ছাড়া জেলার অন্য নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে এখনো পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।