কাজ পেতে দুই প্রতিষ্ঠানের দৌড়ঝাঁপ, সিভিল সার্জনকে ম্যানেজের চেষ্টা

কাজ পেতে দুই প্রতিষ্ঠানের দৌড়ঝাঁপ, সিভিল সার্জনকে ম্যানেজের চেষ্টা

কাজ পেতে দুই প্রতিষ্ঠানের দৌড়ঝাঁপ, সিভিল সার্জনকে ম্যানেজের চেষ্টা

কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে এখনো লাইসেন্স নবায়ন হয়নি আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজের। কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় দু’দফায় দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত অধিদপ্তরের।

কিন্তু নতুন সিভিল সার্জনকে ম্যানেজ করে কার্যাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টায় তদ্বির অব্যাহত রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটির। এজন্য গত কয়েকদিন ধরে ওই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে কয়েকজন লোক সিভিল সার্জনের দপ্তরে ঘোরাঘুরি করছেন। যার প্রমাণ সেখানের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করলেই পাওয়া যাবে বলেও সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

প্রাপ্ত তথ্য, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, খুলনা সিভিল সার্জনের দপ্তর, জেনারেল হাসপাতাল, নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সিভিল সার্জনের আওতাধীন বেশকিছু স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্য চলছে প্রায় পাঁচ বছর ধরে। কখনো মাছরাঙা সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড আবার কখনো মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজ নামের আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান কর্মচারী নিয়োগের নামে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছে। সর্বশেষ গত অর্থ বছর পর্যন্ত মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজের মেয়াদ থাকলেও বর্তমানে তাদের আওতাধীন কর্মচারীরা কাজ করছেন বিনা মজুরিতে।

আবার ওই প্রতিষ্ঠানের আওতায় কাজ করেও বিগত দিনে পাঁচ মাসের মজুরি বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি চাকরি দেয়ার সময় নগদ নেয়া টাকা পাওনার দাবিতে কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে দু’দফায় অভিযোগ দেয়ার পর প্রথম দফায় ওই প্রতিষ্ঠানকে পত্র দিয়ে সাত দিনের মধ্যে কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের জন্য বলা হয়।

কিন্তু সেই সাত দিনের সময় অতিবাহিত হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। এরপরে আবারো অপর একটি আবেদন দেয়ায় বিগত প্রায় এক মাস আগে সেটির শুনানি শেষে অধিদপ্তর থেকে সিভিল সার্জনের দপ্তরে পত্র দিয়ে কর্মচারীদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হয়। অর্থাৎ ওই বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত থাকায় মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

কিন্তু লাইসেন্স নবায়ন না হলেও কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য তদ্বির চলছে সমানে। আবার পাল্টা তদ্বিরও চলছে অপর প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাছরাঙা সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড এর পক্ষ থেকে। অর্থাৎ দু’টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই চলছে তদ্বির। এক পক্ষ চাচ্ছে কাজের মেয়াদ বাড়াতে অপর পক্ষ চাচ্ছে নতুন টেন্ডার দিয়ে কাজ পেতে।

যদিও মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজের গত অর্থ বছরের কার্যাদেশের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপ্ন হয়েছিলেন মাছরাঙা সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু মাঝপথে এসে বিবাদী পক্ষের সঙ্গে আঁতাত করায় মাঝপথেই থমকে যায় সবকিছু।

জনশ্রুতি রয়েছে, বর্তমানে দুদকের মামলায় চার্জশিটভুক্ত এবং ওএসডি হওয়া সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদের মধ্যস্থতায় দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা হয়। এরফলে বাদী পক্ষকে বিবাদী পক্ষের দিতে হয় মোটা অংকের অর্থ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিভিল সার্জনের ওএসডি হওয়ায় দু’টি প্রতিষ্ঠান আবারো পৃথক হয়ে ভিন্ন ভিন্নভাবে তদ্বির করছেন কাজটি পাওয়ার জন্য।

এদিকে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এমন রেষারেষির শিকার হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওইসব কর্মচারীরা। এক গ্রুপ শ্রম দপ্তরে ধর্না দিয়ে আগের পাওনা পাওয়ার চেষ্টা করছেন অপর গ্রুপের বেতনেরও কোন নিশ্চয়তা নেই। সব মিলিয়ে পানি গড়াচ্ছে নিচের দিকে অর্থাৎ কর্মচারিদের পাওনার বিষয়টি রয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে।

এসব বিষয়ে খুলনার বর্তমান সিভিল সার্জন ডা: মো: সবিজুর রহমান বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজ গতবছর টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ পেয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার জন্য আরো এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধির নিয়ম রয়েছে। তবে দ্বিতীয় গ্রেডের ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠানকে তিনি কিভাবে একবছর মেয়াদ বৃদ্ধি করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ীই সব কিছু করা হবে।

অপরদিকে, সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব বিভাগের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রয়েছে দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নগদ অর্থ নিয়ে কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতির অভিযোগ। তিনি উভয় পক্ষের কাছেই বলছেন, সিভিল সার্জন যেহেতু নতুন সেহেতু তিনি তাকে যেভাবে বোঝাবেন সেভাবেই কাজ হবে। এজন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তদ্বিরকারীরাও ওই ব্যক্তির পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

এআই

Explore More Districts