জীবিত মাকে মৃত্যু, বাউফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের কালিখোলার জমি বিক্রি করার অভিযোগ

জীবিত মাকে মৃত্যু, বাউফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের কালিখোলার জমি বিক্রি করার অভিযোগ

৩০ অক্টোবর ২০২৩ সোমবার ১:০০:৫৬ পূর্বাহ্ন

Print this E-mail this


জীবিত মাকে মৃত্যু, বাউফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের কালিখোলার জমি বিক্রি করার অভিযোগ

প্রতিনিধি, বাউফল, পটুয়াখালী জীবিত মাকে মৃত্যু দেখানো হয়েছে। তিন ভাইয়ের সবাই জীবিত। অথচ নিজেকে একক ওয়ারিশ দাবি করে, তাও আবার ভুয়া ওয়ারিশ। এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে দানপত্র দলিল নিবন্ধন করে একটি প্রভাবশালী মহল পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের কালিখোলার জমি দখল করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দানপত্র দলিল বাতিলের জন্য একটি মাদ্রাসার সাবেক সুপার মোহাম্মদ সুলতান আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তি উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।ওই ব্যক্তির নাম পরিমল হালদার (৪২)। তাঁর বাবার নাম চিত্ত রঞ্জন হালদার, মায়ের নাম পুস্প রানী হালদার। তাঁর বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামে।

ভূমি কার্যালয়ের নথি অনুযায়ী ভরিপাশা মৌজার ৬৩৮ খতিয়ানের ৬৩৮২ নম্বর দাগের ৮ শতাংশ জমি হিন্দু সম্প্রদায়ের খালিখোলা। যা হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবহারের জন্য। কোনোভাবেই বিক্রি করা যাবে না।কিন্তু ওই জমি পরিমল হালদার নামে ওই ব্যক্তিকে ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ২০২৩ সালের ১১ মে ২ দশমিক ৮১ শতাংশ জমি দানপত্র দলিল করেছেন রতন ফরাজির স্ত্রী কমলা বেগম। বাউফল উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রি কার্যালয়ের দলিল নম্বর ৩২১৩/২০২৩)। তিনি (কমলা) ওই জমি তাঁর দখলে নিয়েছেন। এছাড়াও একই দিন একই খতিয়ানের ৬৩৮০ ও ৬৩৮১ নম্বর দাগের ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমি একই ব্যক্তির কাছ থেকে দানপত্র দলিল নিবন্ধন (দলিল নম্বর ৩২১৪/২০২৩) করে নিয়েছেন ভরিপাশা গ্রামের আবদুল বারেক হাওলাদের ছেলে প্রবাবশালী মো. আনিচুর রহমান ও মুনসুর আলী হাওলাদারের ছেলে জাকির হোসেন। তাঁরা ওই জমি দখলের পায়তারা করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য ও ভূমি কার্যালয়ের নথি অনুযায়ী এই জমির মালিক প্রফুল্ল কুমার সেন। তিনি মারা গেছেন কয়েক যুগ আগে। তাঁর মৃত্যুর পর একমাত্র ওয়ারিশ ছিলেন তাপস সেন। তিনিও ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মারা গেছেন।

পরিমল হালদারকে প্রফুল্ল কুমারের ওয়ারিশ মানে তাঁর মেয়ের ঘরের একমাত্র নাতি দেখানো হয়েছে। দলিলে উল্লেখ পরিমল হালদারের জাতীয় পরিচয়পত্র (৬৪০২৩৩২৩২১) অনুযায়ী তাঁর বাবার নাম চিত্ত রঞ্জন হালদার, মায়ের নাম পুস্প রানী হালদার। তাঁর বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামে।

দানপত্রের ওই দুটি দলিলে পরিমল হালদার তাঁর মাকে মৃত্যু দেখিয়েছেন এবং একমাত্র সন্তান দাবি করেছেন। ঘটনার সত্যতা যাছাইয়ের জন্য সম্প্রতি সরেজমিনে গৌরনদীর দেওপাড়া গ্রামে গিয়ে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিমল হালদারেরা তিন ভাই এবং তাঁর মা জীবিত। তিন ভাইয়ের মধ্যে পরিমল সবার ছোট। পরিমলের মা পুস্প রানী হালদারের জাতীয় পরিচয়পত্র (৮৬৭৫৪১৫৫৮৫) অনুযায়ী তাঁর বাবার নাম বিশ্বনাথ বেপারী। বিশ্বনাথ বেপারীর বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে।দলিলে সংযুক্ত করা পরিমলের ছবির অবিকল কপি

দেখানো হলে তাঁর মেঝ ভাই পলাশ হালদার বলেন,সে (পরিমল) তাঁর ছোট ভাই। মা পুস্প রানী হালদার বলেন,এই পরিমল তাঁর ছোট ছেলে।

পলাশ হালদার ও পুস্প রানী হালদার অভিন্নভাবে বলেন,‘এসব বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। আর বাউফল উপজেলায় তাঁদের কোনো আত্মীয় নাই। জীবনে কোনোদিন বাউফল উপজেলার ভরিপাশা গ্রামে তাঁরা যাননি। প্রফুল্ল কুমার সেন নামে কাউকে চেনেনও না।’ পলাশ হালদার আরও বলেন,তাঁর নানার নাম বিশ্বনাথ বেপারী। প্রতারণার এ বিষয়টি জানাজানি হলে পরিমল গাঢাকা দেন।

এ বিষয়ে আনিচুর, জাকির হোসেন ও কমলা বেগম অভিন্নভাবে বলেন,‘প্রতারণা করলে পরিমল করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে তাঁরা জড়িত না।’

বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রব হাওলাদার বলেন,‘ওরা (পরিমল) তাঁর ইউপি সদস্য সুকুমার শিকারীর প্রতিবেশী। ওর (পরিমল) বাবা মারা গেছেন। তবে মা জীবিত এবং আরও দুই ভাই আছে, তাঁরা জীবিত।’

ইউপি সদস্য সুকুমার শিকারী বলেন,‘পরিমল অনেক বড় ধরনের প্রতারণা করেছে। তবে সে একা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তাঁদের সবাইকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা উচিৎ।’

উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার হাফিজা হাকিম রুমা বলেন,‘অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে দিয়েছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ’মি) প্রতীক কুমার কুন্ডু বলেন,‘কালিখোলার জমি বিক্রি করার কোনো সুযোগ নাই। কেউ দখল করলে অবশ্যই উচ্ছেদ করা হবে।’

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক



শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts