নার্সিং মহাপরিচালক বরাবর প্রায়
আড়াইশ’ নার্সের লিখিত অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার ঃ মাত্র দু’জন নার্সের কারণে গোটা হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এমন অভিযোগ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রায় আড়াইশ’ নার্সের। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে এমনটি উঠে এসেছে। অভিযোগে খুমেক হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডের ইনচার্জ এবং আইসিইউ ওয়ার্ডে কর্মরত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কথা তুলে ধরা হয়। এছাড়া হাসপাতালের নার্সদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য তুলে ধরে সংবাদপত্রে বক্তব্য দেওয়ায়ও ওই দু’জনের বিরুদ্ধে শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর খুমেক হাসপাতালের ২৪৫জন নার্স স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ওই হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার ও সিনিয়র স্টাফ নার্সরা বিগত কয়েক মাস ধরে প্রসূতি ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও আইসিইউ ওয়ার্ডের কর্মরত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে মানষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। বিশেষ করে ওই দু’জনকে নাইট ডিইটি দিলেই হাসপাতাল সম্পর্কে নানা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সংবাদপত্রে দিয়ে হাসপাতালের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়। কোন কোন পত্রিকায় সেগুলো যাচাই-বাছাই না করে প্রকাশ করা হয়। তাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হলেও তারা নিবৃত না হয়ে বরং প্রতিনিয়ত বেপরোয়া হয়ে উঠছেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। যার কিছু প্রমাণ পেনড্রাইভের মাধ্যমে নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে।
অবশ্য তাদের এমন বেপরোয়ার কারণ হিসেবে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ডেপুটি নার্সিং সুপারিনটেনডেন্টের সাম্প্রতিক কিছু কঠোর পদক্ষেপই ওই ক্ষীপ্ততার মূল কারণ। কারণ ডেপুটি নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট রোকেয়া খাতুন সম্প্রতি যোগদান করেই নার্সদের একটি শৃংখলার মধ্যে আনার চেষ্টা করেন। আর তার কিছু পদক্ষেপের ফলে যারা ইতোপূর্বে কাজে ফাঁকি দিতেন তাদের মধ্যে এক প্রকার ক্ষীপ্ততা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ইতোমধ্যে যেসব অনিয়ম হাসপাতালে হতো সেগুলো দমন করার ফলে ওইসব কাজের ক্ষেত্রে অনিহা দেখানো নার্সদের গাত্রদাহ হয়। অনেকে ইচ্ছেমতো ডিউটিতে আসতেন বলে সেগুলো কঠোর হাতে দমনের চেষ্টা করেন ডেপুটি নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট। এছাড়া ডিউটিতে আসা-যাওয়ার সময়ের ওপর কঠোরতা আরোপ, নার্সদের সঠিক ইউনিফরমের আওতায় আনা, সকল প্রকার ছুটি নিয়ে ইচ্ছেমত নার্সদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে আনা এবং কাজে ফাঁকি দিয়ে এখানে সেখানে গোলমিটিং করার ব্যাপারে নার্সদের মাসিক মিটিংয়ে কঠোরভাবে হুশিয়ারী উচ্চারণ করার কারণেই অনেকের গাত্রদাহ হয়।
নার্সদের পক্ষ থেকে দেওয়া অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই হাসপাতালে নার্সের সংখ্যা মোট ৪৮৫জন। এর মধ্যে সংযুক্তিতে আছেন ৬৯জন আর শূণ্যপদ রয়েছে দু’টি। অর্থাৎ যেখানে পাঁচশ’ শয্যার এ হাসপাতালে ৪১টি ওয়ার্ডে ১৮শ’র বেশি রোগী অবস্থান করে সেখানে মাত্র ১২জন নার্সিং সুপারভাইজার নিয়ে গোটা নার্সদের পরিচালনা করতে হয়। ওই ১২জনের মধ্যেও আবার তিনজন শীঘ্রই পিআরএলএ যাচ্ছেন।
ওই দু’জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের বিরুদ্ধে আইইউডি কপারটি পরানোর ব্যাপারেও সরকারী কপার্টির পরিবর্তে কোম্পানীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে গোপনে রোগীদের কাছে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রসূতি ওয়ার্ডে ডিউটিতে থাকা ছয়জন আয়া এবং ক্লিনারের কাছ থেকে ওই ওয়ার্ডের ইনচার্জ ১২ হাজার টাকা মাশোহারা নেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অপরদিকে, আইসিইউ ওয়ার্ডে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্সের বিরুদ্ধে রয়েছে থ্রিপিচ বিক্রি ও প্রশিক্ষণের নামে নার্সদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ।
উক্ত দু’জন নার্সের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে খুলনা মেডিকেল কলেজ কোয়ার্টারে অবৈধ দখলে থাকারও অভিযোগ রয়েছে। কোয়ার্টারের ৫/সি নম্বর ভবনের ৪র্থ তলার পশ্চিম পাশের এক হাজার বর্গফুটের বাসাটি বরাদ্দ রয়েছে হাসপাতালের আফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক শামীমা আকতারের নামে। কিন্তু সেখানে দীর্ঘদিন ধরে থাকছেন একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স।
এ ব্যাপারে বরাদ্দ প্রদানকারী খুমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ দীন-উল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য না করে বরং এটি সংশ্লিষ্ট নার্সসহ আরও অনেকের কাছে প্রচার করেন। যে কারণে উক্ত নার্স বিষয়টি নিয়ে নিউজ না করার জন্য বিভিন্নভাবে তদ্বির করেন।
যদিও এ ব্যাপারে সম্প্রতি খুলনা মেডিকেল কলেজের সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, উক্ত বাসাটি সংশ্লিষ্ট নার্সের নামে বরাদ্দ নেওয়ার জন্য তিনি আবেদন করেছেন। কিন্তু এতোদিন অবৈধভাবে থাকার দায়ে তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কর্তৃপক্ষের ব্যাপার।
পাল্টা অভিযোগ ঃ এদিকে, খুমেক হাসপাতালের সিংহভাগ নার্সের দেওয়া অভিযোগ খন্ডাতে পাল্টা একটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তরে। যদিও ওই অভিযোগপত্রে পাঁচজনের স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে কিন্তু সেখানে কারও নাম নেই। অস্পষ্ট স্বাক্ষর করা কম্পিউটার কম্পোজ করা ওই অভিযোগটি হাসপাতালের ডেসপাস শাখায় রিসিভ হয়েছে ২১ অক্টোবর। জনশ্রুতি রয়েছে, যে দু’জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের দু’জনের হাতেই ওই পাঁচজনের স্বাক্ষর করা হয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ তিনি এখনও পাননি। যদি ডেসপাস শাখায় এমন অভিযোগ দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে সে ব্যাপারে নতুন পরিচালক এসে ব্যবস্থা নেবেন।