কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে তিনদিনে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজনই কক্সবাজারের স্থানীয়। দুই ঘটনায় সাগর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় দু’জনকে।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) মোহাম্মদ সাগর এবং ইয়াছিন আরাফাত নামের দুই ফটোগ্রাফার বন্ধু সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে সৈকতের সীগাল পয়েন্টে ডুবে যায়। তখন ইয়াছিন আরাফাতকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও মোহাম্মদ সাগরকে (১৭) ২২ ঘন্টা পর বুধবার (১১ অক্টোবর) উদ্ধার করা হয় মৃত।
এর একদিন না যেতেই বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শৈবাল পয়েন্ট গোসলে নেমে আকরামুল ইসলাম সাজিদ(১৬) এবং আরিফুল ইসলাম (১৬) নামের দুই স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়।
ঘটনার নেপথ্যে কারণ বের করতে কথা হয় মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সাগর থেকে জীবিত উদ্ধার হয়ে বেঁচে ফেরা ইয়াছিন আরাফাতের সাথে। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা দুই বন্ধু সমুদ্র সৈকতে ফটোগ্রাফি করি। যখন অনেক গরম অনুভব হচ্ছিল তখন ক্যামেরা রেখে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গোসল করতে নামি। আমরা গোসল করতে করতে সীগাল পয়েন্টের দিকে চলে আসি। আমরা কম পানিতেই গোসল করছিলাম। হঠাৎ সেখানে আমরা গর্তে পড়ে যাই। তখন আমরা তলিয়ে যেতে থাকি। আমাকে ওয়াটার বাইক চালক উদ্ধার করে নিয়ে আসলেও আমার বন্ধুকে নিয়ে আসতে পারেনি। তার মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার জীবিত উদ্ধার হওয়া আহমেদের সাথেও কথা হয়। তার চোখেমুখে এখনো দুই বন্ধুকে চোখের সামনে হারানোর স্মৃতি ভেসে উঠছে। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা তিন বন্ধু বিকেলের দিকে সমুদ্র সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে ফুটবল খেলতে যাই। ফুটবল খেলা শেষে আমরা গোসল করতে নামি। কম পানিতেই গোসল করছিলাম। হঠাৎ গর্তে পড়ে যাই আমরা। আমি কোনমতে জীবিত ফিরতে উঠতে পারলেও আমার দুই বন্ধু মারা যায়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ২০১৫ সাল থেকে ৯ বছর কাজ করছে সী সেইফ লাইফগার্ড প্রজেক্টের ফিল্ড টিম ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ। অবশ্য লাইফগার্ড প্রজেক্ট শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে। তিনি বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দরিয়ানগর পয়েন্টের পর হ্যাচারি যেখানে করছে সেখান থেকে কবিতা চত্বর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় বিরাট গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। যেটাকে গুপ্তখাল বা হিডেন ক্যানেল বলে থাকি। ঢেউ এর সাথে সাথেই গর্তটি ভাঙা-গড়া রূপ ধারণ করছে। বর্তমানে যারা মারা যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই গর্তে পড়েই মৃত্যু হচ্ছে। ভাটার সময় পানি নেমে গেলেই গর্ত ভেসে উঠে বিরাটভাবে।
তিনি আরও বলেন, এবছর যারা মারা গেছে তাদের বেশিরভাগই স্থানীয়। কারণ তারা মনে করে সাঁতার জানে কিন্তু গুপ্তখালে পড়লে সাঁতার জানলেও রেহাই নেই। দুমড়েমুচড়ে নিয়ে যায়। আর বেশিরভাগ তরুণ বলে তারা লাইফগার্ডের কথাও শুনতে চায় না।
বিষয়টি নিয়ে বার্তা২৪.কম-কে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পরিদর্শক গাজী মিজানুর রহমান বলেন, লাইফগার্ড থেকে শুনেছি গুপ্তখাল সম্পর্কে। পর্যটক এবং স্থানীয়দের মাঝে নির্দেশনা না মানার প্রবণতা বেশি বলেই দুর্ঘটনা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বারবার সবাইকে বলা হচ্ছে লাইফগার্ড যেখানে আছে সেখানে গোসলে নামতে আর তাদের নির্দেশনা মানতে। আর সমুদ্রের গভীরে গোসলে না যেতে। আসল কথা হচ্ছে জনসচেতনতা। জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে দুর্ঘটনাও হবে না।