মোশফিকুর রহমান
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের উদ্যোগে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কাজ শেষ হয়েছে দুবছর আগেই। আগামী পহেলা জুন এই অবতরণ কেন্দ্রটি উদ্বোধন হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই অবতরণ কেন্দ্রটি চালু হলে মৎস্য ব্যবসায়ীদের বহুদিনের দাবি পূরণ হবে। এই আড়ৎ থেকে সরকার বছরে কোটি টাকার রাজস্ব পাবে। অত্যাধুনিক এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি অবিক্রিত মাছ পচে যাবার দুশ্চিন্তাও দূর করবে।
জানা যায়, ২০১৭ সালে ওয়েজখালী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে রয়েছে উন্নতমানের মাছ প্যাকেজিং করার জন্য প্যাকেজিং এলাকা, আড়ৎঘর ভবন, জেনারেটর কক্ষ, আইস প্লান্ট, আবাসিক ভবন, অফিস ভবন, ইন্সপেকশন রুম, স্যানিটেশন ও পয়নিস্কাশনের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া বরফায়িত একটি গাড়ীও আড়ৎদাররা নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
শহরের আধুনিক কিচেন মার্কেটে জেলে ও পাইকারদের হাঁক ডাকে সড়গরম থাকলেও নিস্তব্ধ ওয়েজখালী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র শীঘ্রই জমে ওঠবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
খুচরা মাছ বিক্রেতা আব্দুল্লাহ বললেন, ওয়েজখালী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চালু হলে শহরের কিচেন মার্কেটের জন্য ভালো হবে। ময়লা আবর্জনা কমে যাবে।
আড়ৎদার ওহি বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়েজখালীতে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র করে দেওয়ায় আমাদের জন্য ভালো হেেয়ছে। এটি চালু হলে সুন্দর পরিবেশে ব্যবসা করতে পারব আমরা।
ওয়েজখালী বাজারের মাছ ব্যবসায়ী দুদু মিয়া বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চালু হলে শহরের কিচেন মার্কেটে ক্রেতারা সুন্দর ভাবে মাছ কিনতে পারবেন। সেখানে ময়লা আবর্জনা থাকবে না। আড়ৎদাররাও ভালো করে তাদের ব্যবসা করতে পারবেন।
মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. তৈয়বুর রহমান বললেন, আড়ৎদাররা ওয়েজখালী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গেলে আমাদের কিচেন মার্কেটের পরিবেশ ভালো হবে এবং ক্রেতাদের সুবিধা হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামশুল করিম বলেন, হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ মৎস্য সম্পদের ভা-ার। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চালু হলে হাওরের মাছের গুণগত মান ভালো থাকবে। আড়ৎদাররা নিরাপদে মাছ বিক্রি করতে পারবে, আড়ৎদারদের জন্য বিশ্রামাগার থাকবে। বরফকল থাকবে। একটি বরফায়িত গাড়ীও ওখানে থাকবে। কেউ মাছ বিক্রয় করতে না পারলে, ওই গাড়ীতে করে মাছ রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবেন, কোন মাছই নষ্ট হবে না।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ ফিরোজ বললেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন ২০২১ সালে সুনামগঞ্জের ওয়েজখালীতে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ করে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এই কেন্দ্রে রয়েছে ২৫ টি আড়ৎঘর, ২০ টি গদিঘর, ১ টি আধুনিক বরফকল। প্যাকেজিং করার জন্য যথেষ্ট জায়গাও রয়েছে। মাছের ফরমালিন পরীক্ষার জন্য আছে ১টি ল্যাব আছে। ৫ থেকে ৭ টি ট্রাক লোড আনলোড করার পার্কিং ব্যবস্থা আছে। এটি চালু হলে ঢাকা সহ বাইরের পাইকাররা আসবেন। এতে করে আড়ৎদারদের কাছে মাছ বেশি আসবে। মৎস্যজীবীরা ন্যায্য মূল্য পাবে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাওর এলাকায় তিনটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জে ১টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। এটি আধুনিক এবং উন্নত মানের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। এতে সুষ্ঠু ও ভালো করে, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাছ প্যাকেটজাত করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।
তিনি বলেন, আমরা মৎস্যজীবী ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী পহেলা জুন তারিখে পাইকারি আড়ৎদাররা ওয়েজখালী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে চলে যাবেন। শহরের কিচেন মার্কেটে থাকবেন খুচরা বিক্রেতারা।