বিশেষ প্রতিনিধি
দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’র বিরোধীতা প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা জগন্নাথপুরে রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আগামী ২৫ মে’র উপ-নির্বাচনেও এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী নির্বাচন যুদ্ধে নেমেছেন। এরা হলেন- দলের প্রবীণ নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন রাশীদ। মঙ্গলবার এই উপজেলা নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে। দলীয় প্রার্থী নুরুল ইসলামের নৌকা’র বিরুদ্ধে আনারস নিয়ে মাঠে নেমেছেন হারুন রাশীদ।
প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রইছ এঁর নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ-৩ আসনের জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জের বর্তমান সংসদ সদস্য পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এই নির্বাচনী এলাকার জগন্নাথপুরে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। তবে স্থানীয় নির্বাচন থেকে জাতীয় নির্বাচন এখানে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয় আওয়ামী লীগ।
গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রাথী হিসাবে জয়লাভ করেছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত আকমল হোসেন। ওই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা। গত ২৬ ডিসেম্বর আকমল হোসেন রাজধানী ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আগামী ২৫ মে এই উপজেলার চেয়ারম্যান পদের শূন্যপদের উপনির্বাচন। এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলামের পক্ষে নেমেছেন মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা। প্রতিদ্বন্দ্বি হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি হারুন রাশীদ। হারুন রাশীদ চিলাউড়া-হলদিপুরের দুইবারের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুস সামাদ আজাদের পুত্র আজিজুস সামাদ আজাদের ঘনিষ্টজন হিসাবেই পরিচিত তিনি ।
হারুন রাশীদকে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য বাড়ীতে গিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন। গেল শনিবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলামসহ তিনি চিলাউড়ায় হারুন রাশীদের বাড়ীতে যান। তাতেও কাজ হয় নি।
মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রতীক ‘আনারস’ পেয়ে হারুন রাশীদ এই প্রতিবেদককে ফোনে বললেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই আমার। দলের বহু কর্মী আমার সঙ্গে আছেন। মাঠও ভালো আছে। গ্রাম ও এলাকাবাসীর অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি আমি। এলাকাবাসী চান আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। এজন্য আজিজুস সামাদ ডনের অনুরোধ প্রত্যাখান করেছি। আমার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবার কোন সুযোগ নেই দলের। আমার কোন পদ পদবী আপাতত নেই। আমি দলের একজন কর্মী।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম বললেন, দলের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। কার্যক্রমেই তা প্রকাশ পাবে। বাইরে এক, ভেতরে আরেক হলে সকলেই জানতে পারবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বললেন, বিদ্রোহীদের বিষয়ে দলের উচ্চ পর্যায়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় নির্বাচন, হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া এখানে সকলেই নৌকার বিরোধীতা করে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। এজন্য এটি রেওয়াজ হয়ে গেছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রশিদ ভুইয়া বললেন, বিগত পৌর নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী ছিলাম আমি। আমার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। দল কোন ব্যবস্থা নেয় নি। এসব কারণে দলীয় প্রতীকের বিরোধীতা করতে কেউ ভয় পায় না।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন বললেন, ব্রিদ্রোহী প্রার্থী আমার নিজের ইউনিয়নের। আওয়ামী লীগের পুরোনো সম্মানিত মানুষ। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে তিনি যাতে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন, এজন্য উপজেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতিসহ আমি বাড়ীতে গিয়ে অনুরোধ করেছি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুটও তাকে দলের প্রার্থীর সমর্থনে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন। তিনি কারো অনুরোধ রাখেন নি। দলে থাকার সুযোগ আর নাই তার।
আজিজুস সামাদ ডন অবশ্য দাবি করেছেন, দল ঐক্যবদ্ধ, হারুন রাশীদের প্রার্থীতায় নৌকার ভোটে প্রভাব পড়বে না। সকলে মিলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় থাকবেন তারা।
এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অন্য তিন প্রার্থীর মধ্যে মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতাউর রহমান ‘লাঙ্গল’, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আব্দুল কাইয়ুম কামালি সিতু ‘খেজরগাছ’, স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ তালহা আলম ‘কাপ পিরিচ’ প্রতীক পেয়েছেন। প্রতীক পাবার পর বিকাল থেকেই জমজমাট প্রচারণা শুরু হয়েছে উপজেলাজুড়ে।
তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৫ মে ইভিএমএ ভোট হবে এই উপজেলায়।
