লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত পিস্তল ও টাকা নিয়ে গেছে দুষ্কৃতকারীরা – Alokito Mymensingh 24

লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত পিস্তল ও টাকা নিয়ে গেছে দুষ্কৃতকারীরা – Alokito Mymensingh 24

আপডেটঃ 12:50 pm | May 03, 2022

লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত পিস্তল ও টাকা নিয়ে গেছে দুষ্কৃতকারীরা – Alokito Mymensingh 24

প্রদীপ ভৌমিক ॥ ঈদ বাংলাদেশের হিন্দু, মুসলমানের কাছে সার্বজনীন উৎসব। ঈদের আগেরদিন গভীর রাত্র পর্যন্ত বন্ধুবান্ধব সবাই মিলে হই হুল্লোর এবং আড্ডায় মশগুল থাকি আমরা। কিন্তু এবারের ঈদের আনন্দ বিষাদে ভরা। এর কারণ মাত্র দু’দিন আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয়জন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল আলম লিটন কে। সারারাত বিনিদ্র রজনী পার করেছি আর ভেবেছি মরে যাওয়ার কথা ছিল তো আমার। কিন্তু লিটনরা মরতে দেয়নি। আজ থেকে পাঁচ বছর পূর্বে আমার যখন হার্ট এটাক হল, আমাকে ময়মনসিংহ হাসপাতাল থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হল ঢাকার হার্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউশনে। পাঁচটি ব্লক নিয়ে আমি চিকিৎসাধীন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম আমি বাঁচবো না মরে যাব। এমনি সময়ে একদিন এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল এর সাথে সামিউল আলম লিটন এল আমাকে দেখতে। আমার বন্ধুবর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বাবু, ডাক্তার এম এ আজিজ, মেয়র ইকরামুল হক টিটু, এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল , আমিনুল হক শামীম , ফখরুল আলম চৌধুরী বাপ্পী, শুভকাঙ্খী সুমন ভৌমিক ও পরিবারের লোকজন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতালে ওপেন হার্ট সার্জারি করানো হবে। আর্থিক অসুবিধার জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না হার্ট সার্জারির। এমনি অবস্থায় সামিউল আলম লিটন আমার হাত ধরে বলল আপনাকে বাঁচাতে হবে, আমাদের স্বার্থে হলেও আপনার বেঁচে থাকা প্রয়োজন। টাকার জন্য ভাববেন না বলে এক লক্ষ টাকার একটি চেক আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল প্রয়োজনে আরো দেবো তবু আপনার চিকিৎসা হবে। আমার ওপেন হার্ট সার্জারি হল, আমি সুস্থ হয়ে ফিরে এলাম। কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে লিটন চলে গেল পরপারে। আমরা তার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। এই দুঃখ বোধটা আমি সহ অনেককেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাই ঈদের আনন্দ আমাদের কাছে ম্রিয়মাণ। সামিউল আলম লিটনের হার্ট অ্যাটাকের কারণ সম্বন্ধে যা শুনেছি তা হল তার ছোট ভাই জুয়েল তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে এমনকি গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছে। আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ভয় দেখিয়েছে। সেই দুঃখ বোধ ও গায়ে হাত তুলে আঘাত দেওয়ার কারণ থেকেই লিটনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুসের হাত ধরে নাকি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে লিটন বলছিল সে বেশিক্ষণ বাঁচবে না কিন্তু ভাইয়ের এই আচরণের দুঃখ নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তির অল্প সময়ের মধ্যেই চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে লিটন চলে গেল পরপারে। লিটনের লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত পিস্তল ও টাকা নিয়ে গেছে দুষ্কৃতকারীরা। লিটনের স্ত্রী ও শুভাকাঙ্খীরা গৌরীপুর থানায় মামলা করতে চাইলে থানা থেকে মামলা নিতে চাইছে না বলে জনশ্রুতি আছে। বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বাবু গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ কে ফোনে মামলা নিতে বললে অফিসার নাকি খুব একটা আমলে নেয়নি। এই কথাগুলি আমার শোনা কথা। যদি কথা সত্য হয়ে থাকে তবে দুঃখ পাওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক যদি বিচার না পায় তাহলে আমরা এ দুঃখ রাখব কোথায়। লিটনের খোয়া-যাওয়া পিস্তলটি উদ্ধার হয়েছে কিনা জানিনা, জানিনা থানায় মামলা নেয়া হয়েছে কিনা। তবে‌ এ ব্যাপারে পুলিশের গড়িমসির জন্য তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জানাই। সামিউল আলম লিটন আজীবন স্বপ্ন দেখতো গৌরীপুরের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে। গৌরীপুরের জনপ্রতিনিধি হয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে সুখে দুঃখে। তার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। লিটন সব সময় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে এসে দাড়াত বন্ধুর মত ভাইয়ের মতো। সে ছিল অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের অনুসারী। আজকের এই দিনে বারবার তাকে মনে পড়ছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দকে ছাপিয়ে বিষাদের সুর আমাদের হৃদয়ে ধ্বনিত হচ্ছে। আর বার বার মনে হচ্ছে চলে যাওয়ার কথা ছিল আমার কিন্তু চলে গেলে তুমি। আমাদের স্মৃতিতে তুমি চির অম্লান হয়ে থাকবে। যেখানেই থাক, শান্তিতে থাক, ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা করি।

Explore More Districts