বালু উত্তোলন: যমুনার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাঁধে ধস

বালু উত্তোলন: যমুনার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাঁধে ধস

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বাঁধ ধস দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে উপজেলার কুলকান্দি ইউনিয়নের কুলকান্দী হার্ড পয়েন্ট থেকে গুঠাইল হার্ড পয়েন্টের মাঝামাঝি কুলকান্দি গ্রামের মিয়াপাড়া পুরাতন পাইলিংঘাট এলাকায় দুইটি পয়েন্টের বাঁধে প্রায় ২৫ মিটার অংশে ধস দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ বাঁধে নিকটতম স্থান থেকে স্থানীয় কিছু বালু দস্যুরা দীর্ঘদিন থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি ও বাঁধের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় নির্মাণের দেড় বছরেই বাঁধে সিসি ব্লক ধসে পড়ছে। এতে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে যমুনা নদীর বামতীর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, যমুনার ভাঙন প্রতিরোধে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ফুটানী বাজার থেকে সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা পর্যন্ত তিনটি পয়েন্টে ৪৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০১০ সালে শুরু হয়ে ২০১৭ সালে বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়।

এরমধ্যে ইসলামপুরের কুলকান্দি হার্ড পয়েন্ট থেকে গুঠাইল হার্ড পয়েন্টের আড়াই কিলোমিটারের জন্য ৯০ কোটি টাকার ব্যয়ে যমুনার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প নামে একটি তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে বাধ ভাঙন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উজানের পাহাড়ী ঢলে গত কয়েক দিন থেকে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে উপজেলার কুলকান্দী হার্ড পয়েন্ট থেকে গুঠাইল হার্ড পয়েন্টের মাঝামাঝি কুলকান্দী গ্রামের মিয়াপাড়া পুরাতন পাইলিংঘাট এলাকায় দুইটি পয়েন্ট বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বাঁধের অন্তত ২৫ মিটার অংশ যমুনার গর্ভে ধসে গেছে। বাঁধের সিসি ব্লক ধসে পড়ছে।

হুমকির মুখে পড়েছে কুলকান্দী শামছুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয়, কুলকান্দী বাজার, একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, বসতবাড়িসহ কয়েক শত শত একর ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বাঁধের ধস ঠেকাতে অতিদ্রুত যেনো কর্তৃপক্ষ টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

বাঁধ এলাকা বাসিন্দারা বলেন, বাঁধ নির্মাণ করায় বেলগাছা, কুলকান্দী, পার্থশী ও চিনাডুলী ইউনিয়নসহ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই হঠাৎ করে বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে পানির চাপে বাঁধে ধস দেখা দিতে পারে।’

বাঁধ এলাকার আকবর আলী, সুজন, মিজান, সাইফুল মিজান বলেন, ‘নিম্নমানের কাজ হওয়ায় নির্মাণের দেড় বছরেই বাঁধ ধসে পড়ছে। এছাড়াও একটি শক্তিশালী বালু সিন্ডিকেটরা দীর্ঘদিন যাবৎ নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় যমুনার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ধস দেখা দিয়েছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে তীর রক্ষা বাঁধের যে ৯০ মিটার অংশ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেখানেই নতুন করে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মাঝে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Explore More Districts