একুশে পদকে ভূষিত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, এম এ মালেক চট্টগ্রামের প্রতীক, সিম্বল অব চিটাগাং। তিনি নিজের অনন্য সব কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনি চট্টগ্রামের সেবার জগতে, চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক জগতে, চট্টগ্রামের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ এমন কোনো কার্যক্রম নেই যেখানে তাঁর অনন্য ছোঁয়া লাগেনি। বক্তারা বলেন, নেতা অনেকেই হন, পত্রিকার সম্পাদকও অনেকেই হয়েছেন। কিন্তু এম এ মালেক সবাই হতে পারেন না। চট্টগ্রামের জীবনাচারে মিলেমিশে তিনি এমন এক উচ্চতায় আসীন হয়েছেন যেখানে রাষ্ট্র তাঁকে সম্মানিত করেছে, আমরা তাঁকে সম্মানিত করে নিজেরাই সম্মানিত হচ্ছি। তাঁর বেড়ে উঠা, তাঁর বিকশিত হওয়া, তাঁর জীবনাচার চট্টগ্রামেরই প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি লায়নিজমের অহংকার। সেবামূলক নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এম এ মালেক চট্টগ্রামের অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাতিঘরে পরিণত হয়েছেন। লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাংয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন, এম এ মালেক একুশে পদক পেয়ে শুধু লায়নিজমকেই নয়, চট্টগ্রামকেই সম্মানিত করেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি৪ এর গভর্নর লায়ন আল সাদাত দোভাষ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ড. শামীম রেজা, সদ্য প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন ডা. সুকান্ত ভট্টাচার্য। প্রধান অতিথির বক্তব্যে লায়ন আল সাদাত দোভাষ বলেন, দেশের সেবা সংগঠনগুলোর মাঝে এম এ মালেকই
প্রথম একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। এটি আমাদের জন্য গর্বের, লায়নদের জন্য গর্বের। তিনি আজাদী পরিবারে একই সাথে স্বাধীনতা পদক এবং একুশে পদক প্রাপ্তির মতো অসাধারণ একটি ব্যাপার রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, এটি এমনি এমনি হয়ে যায়নি। এটি তাঁদের কর্মের ফল। এটা অনেক বড় প্রাপ্তি। চট্টগ্রামবাসীর প্রতি ভালোবাসা থেকে এমন সব কর্মকাণ্ডে তাঁরা জড়িত যা আজাদীর সাবেক সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকে স্বাধীনতা পদক এবং বর্তমান সম্পাদক এম এ মালেককে একুশে পদক প্রাপ্তির সুযোগ করে দিয়েছে। এটি একটি বিরল ঘটনা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীম রেজা বলেন, ষাটের দশকে পত্রিকা প্রকাশনা অতি কঠিন একটি ব্যাপার ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এম এ মালেকের পরিবার একটি অসাধারণ কাজ করেছেন। বাংলাদেশের গণমাধ্যম এত সহজে বিকশিত হয়নি বলে মন্তব্য করে ড. শামীম রেজা বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জটিলতা মোকাবেলা করেই এই গণমাধ্যমকে টিকে থাকতে হয়েছে। দৈনিক আজাদী গত ৬২ বছর ধরে টিকে থেকে মানুষের জন্য, মাটির জন্য, সমাজের জন্য এবং রাষ্ট্রের জন্য যেভাবে কাজ করেছে, যেভাবে সমাজ পরিবর্তনের, সমাজ সংস্কারের, মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছে তার নেতৃত্ব দিয়েছেন এম এ মালেক। আর এরই স্বীকৃতি হচ্ছে একুশে পদকের মতো সম্মানীয় একটি পদক। এম এ মালেক আরো বড় পদকের যোগ্য বলে মন্তব্য করে ড. শামীম রেজা সামনের দিনগুলোতে তাঁকে আরো বড় পদকের জন্য সংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখার জন্যও আহ্বান জানান।
সংবর্ধনার জবাবে লায়ন এম এ মালেক বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্তির ফলে যুগ যুগান্তরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যেই পতাকা এনে দিয়েছেন সেই পতাকা নিয়ে আমি শেষ গন্তব্যে যাবো এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা।
এম এ মালেক বলেন, আপনাদের ভালোবাসার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। একুশ আমার অহংকার। একুশ মানে মাথা নথ না করা।
রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, প্রশংসা শুনে আমি লজ্জিত হই। কিন্তু সেই প্রশংসার জন্য গোপনে অপেক্ষা করি। তিনি বলেন, দয়া এমন একটি বিষয় যা অন্ধও দেখতে পারে, বধির শুনতে পায়।
লায়ন সদস্যদের উদ্দেশ্য করে এম এ মালেক বলেন, একুশে পদক পেয়েছি আপনাদের জন্য। আমি বলি, কিছু করতে হলে লেগে থাকতে হবে। তাহলে সাফল্য আসবে। মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই।
১৯৬০ সাল থেকে সংবাদপত্রের সাথে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার মতো এত দীর্ঘ সময় আর কেউ সংবাদপত্রে জড়িত নেই। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি, চট্টগ্রামের সাংবাদিক দিয়ে আজাদী পরিচালনার। কারণ চট্টগ্রামের মানুষ এখানকার সমস্যা সম্ভাবনা ভালোভাবে তুলে ধরতে পারবে। দৈনিক আজাদীর প্রয়াত সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের স্বাধীনতা পদক পাওয়ার কথা স্মরণ করে এম এ মালেক বলেন, দৈনিক আজাদীই একমাত্র পত্রিকা যেটির দুজন সম্পাদকই স্বাধীনতা এবং একুশে পদক পেয়েছেন।
লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাংয়ের প্রেসিডেন্ট লায়ন আবদুর রব শাহীনের সভাপতিত্বে লায়ন তপন দত্ত ও লায়ন আয়েশা হক শিমুর সঞ্চলনায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ডা. শ্রী প্রকাশ বিশ্বাস। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পিডিজি লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পিডিজি লায়ন মনজুর আলম মনজু, সাবেক গভর্নর লায়ন কামরুন মালেক, পরিবারের পক্ষে পারিহা আকতার, লায়ন নুরুল আলম, লায়ন নিশাত ইমরান। অনুষ্ঠানে সাবেক গভর্নর লায়ন মোস্তাক হোসাইন, লায়ন কবির উদ্দিন ভূইয়া, লায়ন রফিক আহমেদ, কেবিনেট সেক্রেটারি লায়ন এস. এম. আশরাফুল আলম আরজু, কেবিনেট ট্রেজারার লায়ন আবু বক্কর সিদ্দিকী, লায়ন রোজী বিশ্বাস, লায়ন রাশেদা মঞ্জুর, মিসেস শামীম রেজা, লায়ন ওসমান গনি, লায়ন মোসলেহ উদ্দিন খান, লায়ন জি কে লালা, লায়ন হাসান মাহমুদ, লায়ন অশেষ কুমার উকিল, কনভেনশন চেয়ারম্যান, লায়ন আবু মোর্শেদ, লায়ন মোসলেহ উদ্দিন অপু, লায়ন ডা. গোপাল ভট্টাচার্য্য, লায়ন তপন কান্তি দত্ত, লায়ন রাজীব সিংহ, লায়ন সাহেলা আবেদীন, ডা: মেসবাহ উদ্দিন তুহিন, লায়ন গাজী শহীদুল্লাহ, লায়ন সোহেল খান, লায়ন ইসমাইল চৌধুরী, লায়ন এস. কে. পালিত, লায়ন সিলভেস্টার বার্নাডেট, লায়ন বাবুল কান্তি লালা, লায়ন রেবেকা নাসরিন, লায়ন সাধন কুমার ধর, লায়ন ডা: হারুন, লায়ন নাজমুল সাকের, লায়ন অনুপম মজুমদার, লায়ন চৌধুরী মৃদুল বড়ুয়া, লায়ন আবিদা মোস্তাফা, লায়ন মোহাম্মদ আলী চৌং, লিও শাহরিয়ার, লিও রাহুল লালা, লিও হাসান।
