বিশেষ প্রতিবেদন ॥ গত ১২ মার্চ শনিবার বিকালে শহরের এক বিধবার বাড়ি দখল ও সন্ত্রাসীর অভিযোগ এনে নড়াইল জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন আলমের বিরুদ্ধে শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এক নাগরিক সমাবেশ ও মানববন্ধন পালিত হয়। ওই মানববন্ধনের বক্তাদের বক্তব্যের সূত্র ধরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সরদার আলমগীর হোসেন আলমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যাকালাপ উল্লেখপূর্বক সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রকাশিত ওই সংবাদে সরদার আলমগীর হোসেনের বক্তব্য নেয়া হয়। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন আমি আলম ওয়ারেশ কায়েম সনদপত্রের জন্য শাহবাদ ইউনিয়ন পরিষদে যাইনি।
অথচ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ খান মাহামুদ জানান গত ১০মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি আলমগীর হোসেন আলমকে সাথে করে শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে যান এবং মৃত মোজাহার হোসেনের স্ত্রী নাছিমা (প্রথম স্ত্রী) ও তার কন্যা সুমির নামে ওয়ারেশ কায়েম সনদপত্রে চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে দিয়ে স্বাক্ষর করান। তবে চেয়ারম্যান জিয়াকে কোন জোর-জবরদস্তি করা হয়নি বলে জানান মাহমুদ খান।
গত বুধবার ১১ টায় নড়াইল জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে নড়াইল জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন আলম, শাহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ খান মাহমুদসহ আওয়ামীলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য দেন শাহাবাদ ই্উনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ খান মাহামুদ।
এ সময় শাহাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন পান্না, মহব্বত খান, সাধান বিশ্বাস, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিলয় রায় বাঁধনসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমি অত্র ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এবং শাহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি।
আমি আমার জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবার ওয়ারেশ কায়েম সনদের জন্য আবেদন করি। নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মো: ইমরান হোসেন তদন্ত করে ওয়ারিশ কায়েম সনদের জন্য প্রতিবেদন দাখিল করে চেয়ারম্যান বরাবর। কিন্তু চেয়ারম্যান এরপর থেকে ওয়ারেশ কায়েম সনদ নিয়ে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করেন। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান জিয়া সনদ বাবদ আমার নিকট ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা দাবি করেন। তখন আমি নিরুপায় হয়ে আমার বন্ধু সরদার আলমগীর হোসেন আলম আমার বন্ধু জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে অবহিত করে সহযোগিতা চায়। এ কারণে গত ১০ই মার্চ সকালে আলম জিয়াকে ফোন করলে জিয়া আলমকে ইউনিয়ন পরিষদে আসতে বলে। আলম আমাকে (মাহমুদ) ফোন দিয়ে তখন জানায় আমি শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে আসতেছি, তুমিও পরিষদে আসো।
আমি পরিষদে উপস্থিত হওয়ার আনুমানিক ১০-১২ মিনিট পর আলম ইউনিয়ন পরিষদে আসে। তখন আনুমানিক সময় দুপুর সাড়ে ১২টা। সরদার আলমগীর হোসেন আলমের অনুরোধক্রমে ওই ওয়ারেশ কায়েম সনদে চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া স্বাক্ষর করে দেন।
এ প্রসঙ্গে শাহাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি নড়াইলকণ্ঠকে জানান, আশরাফ আমার নিকট ওয়ারেশ কায়েম সনদের আবেদন করেনি এবং তার কাছে টাকাও চাওয়া হয়নি। সরদার আলমগীর হোসেন আলম ইতিপূর্বে প্রকাশিত সকল সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন ১০ তারিখে আমার অফিসে তিনি যাননি। কিন্তু আশরাফ খান মাহামুদ বক্তব্যে পরিস্কার করে বলছেন তার পক্ষের লোক হিসেবে সরদার আলমগীর হোসেন ওই ১০ মার্চ তারিখে আমার অফিসে গিয়েছিলেন। ১০ তারিখে আমার অফিসে গেলেন, তাহলে ০৮-০৩-২২ তারিখ দিয়ে সহি করানো ওয়ারেশ সনদ নিলো কেন? এ ছাড়া তিনি বলেন, আমি আমার ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামী আদর্শে রাজনীতি করি। আমি ৫নং শাহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আছি। আশরাফ খান মাহামুদ মিথ্যা তালাক বানাইয়া একজন ওয়ারেশকে বাদ দিয়া অপরাধের পর অপরাধ করছেন। শাহাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান আরও জানান, ইতিমধ্যে আমি নড়াইল জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন, আশরাফ খান মাহামুদসহ সকলের বিরুদ্ধে বিধবাকে বাড়ি থেকে বের করে বাড়ি দখল, জোরপূর্বক ওয়ারেশ সনদ ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্য্যকলাপের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে মানবিক আবেদন জানিছি।
সংবাদ সম্মেলনে আশরাফ মাহমুদ খান আরও বলেন, বিধবা জেসমিনের জমি দখল করা হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, মৃত মোজাহার হোসেনের ১ম স্ত্রী নাসিমা সুলতানা ও তার কন্যা আসমা সুলতানা সুমি তাদের ওয়ারেশ সূত্রে প্রাপ্ত জমি অফেরতযোগ্য ‘পাওয়ার অফ এ্যাটর্নির’ মাধ্যমে আশরাফ খান মাহামুদ ও মহব্বত খানের নিকট নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। যার দলিল নং- ৪৬৮১/২১, তারিখ- ২০২১ সালের ১৫ জুন।
এছাড়া মোজাহের হোসেনের মৃত্যুর পূর্বে ২য় স্ত্রী জেসমিনকে ২০২০ সালের ১৬ জুন তালাক প্রদান করেন। সাংবাদিকরা মোজহার হোসেন মোল্যার স্ত্রী জেসমিন নাহারের তালাক নড়াইল থেকে না হয়ে যশোরের অভয়নগর উপজেলার চলশিয়া ইউনিয়নের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্টার এফ এম আনোয়রুল ইসলামের থেকে হওয়ার যৌতিক কোন কারন বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেও যথার্থতা মেলেনি। তালাকের তথ্যানুসন্ধান করে দেখা যায় ২০২০ সালের জুনের ১৬ তারিখে মরহুম মোজহার হোসেন মোল্যা ওই অভয়নগর উপজেলার চলশিয়া ইউনিয়নের গিয়েই হয়তো জেসমিনকে তালাক দেন। সেই তালাকের চুড়ান্ত নোটিশ স্বামীর মৃত্যর ১৬ মাস গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে ওই মেরেজ রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরিত তালাকের চুড়ান্ত পত্রখানা শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠান হয়। সেটি সরকারি রেজিষ্ট্রি ডাকে নয়। এ বিষয়টি নিয়েও তেমন স্পষ্টতা পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত (তালাকা, নিকাহনামা সংরক্ষিত)।
এদিকে খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিগত ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর মোজহার হোসেন মৃতবরণ করেন। মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার মরদেহ হস্তান্তর করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী জেসমিন নাহারের নিকট (হাসপাতালের ছাড়পত্র সংগ্রহে আছে)। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা মাহমুদ খানের নিকট সাংবাদিকরা জানতে চান মোজহার হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রীকে যদি ১৬ জুন তালাক দিয়ে থাকেন তাহলে খুলনা মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেসমিনের নিকট কিভাবে মোজাহার হোসেনের মরদেহ হস্তান্তর করলেন? অফিস সূত্রে জানা গেছে মোজাহার হোসেনরে স্ত্রী হিসেবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেসমিনের নিকট তার স্বামীর লাশ হস্তান্তর করেন। সাংবাদিকদের এসব প্রশ্নের জবাবে শাহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ খান মাহামুদ বলেন আমি এসব জানি না। আমি ওয়ারেশ সূত্রে ‘পাওয়ার অফ এ্যাটর্নির’ পাই সেই মোতাবেক আলমকে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি।
অফিস সূত্রে জানাগেছে, মোজহার হোসেন মোল্যার মৃত্যুর পর তার পেশনের টাকাও এককভাবে ভোগ করে আসছেন তার স্ত্রী জেসমিন নাহার।