পুলিশ মেমোরিয়াল ডেতে ফরিদপুরে এক সন্তানহারা মাতার আহাজারি
সবুজ দাস : যে মাতার সন্তান হারায়, সে মাতাই বুঝে তার বেদনা! নিজ সন্তানের লাশ কাঁধে করে কবরে রেখে এসেছি। এই বয়সে পরিবারের উপার্জনক্ষম নিজ সন্তানকে হারিয়ে অসহায়ভাবে জীবন-যাপন করে আসছি।” কথাগুলো বলছিলেন, একজন মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্য ভগ্নহৃদয়ের মাতা। একজন সন্তান হারা মায়ের কান্নায় সম্মেলন কক্ষে সে যেন সবার অশ্রæ ভেজা চোখ। এ সময় সন্তান হারা মাতা তিনি তার পাশে দাড়ানোর জন্য পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
(১লা মার্চ) মঙ্গলবার ফরিদপুর পুলিশ লাইনসের হলরুমে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২২ উপলক্ষে জেলা পুলিশ আয়োজিত “কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে সম্মাননা প্রদান, দোয়া ও আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন, জেলার মধুখালী থানার কামারখালী এলাকার মৃত পুলিশ সদস্য দেলোয়ার হোসেন মিরাজের মাতা ফাতেমা বেগম। তার সন্তান পুলিশে দায়িত্বপালনকালে অকাল মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার স্বামীকে হারিয়ে, এবং ৯ মাস পর তার সন্তানকে হারিয়ে অসহায় জীবনযাপনের কথা তুলে ধরেন এবং বিভিন্নদাবী উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান সভাপতিত্বে, তিনি সকলের দাবিগুলো পুলিশের নীতিনির্ধারক কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাবেন বলে জানান। তিনি বলেন, যখন একজন পুলিশ দায়িত্বে থাকে তখন তিনি নিজের জীবনকে না ভেবে একটি চিন্তা করে, কীভাবে মানুষের জীবন বাঁচানো যায়। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের জন্য যারা শহীদ হয়েছেন ও পুলিশের দ্বায়িত্ব পালনের দেশ-বিদেশে নিহত সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।সময়ের পরিক্রমায় পুলিশ বাহিনী আজ উন্নত, চিন্তা ও কল্যাণমূলক পর্যায়ে পৌছেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পুলিশ বাহিনীর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এবং আইজিপি মহোদয় মৃত্যুবরণকারী পুলিশের অসহায় পরিবারের সকল সমস্যা নিরসনে কাজ করবে।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পিপি আই পুলিশ সুপার মোঃ মাহাফুজ্জামান, নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার মোঃ জসীমউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) জামাল পাশা, হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান, পিবিআই পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুর রহমান, নৌ পুলিশ সুপার মোঃ জসিমউদদীন, পুলিশ সদস্য নরোত্তম। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর পুলিশ হেড কোয়ার্টার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ হেলালউদ্দীন ভুঁইয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) ফাহিমা কাদের চৌধুরী, সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) সুমিনুর রহমান, হাইওয়ে সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ নূরুল ইসলাম, টিআই তুহিন লস্কর সহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সদস্য (আর ওয়ান) আনোয়ারুল ইসলামের সঞ্চালনায় মৃত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, শরিফুল আনোয়ার, ফাতেমা বেগম প্রমূখ।
এ সময় তারা তাদের পরিবারের এবং সন্তানদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। দাবিগুলো মধ্যে ছিলো, প্রত্যেক মৃত্যুবরণকারী পুলিশ পরিবারের সন্তানদের সুযোগ-সুবিধা ও রেশনের ব্যবস্থা, চাকরীর সুযোগ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন পুলিশ সুপারের নিকট। আইজিপি মহোদয়ের পক্ষ থেকে ফরিদপুর জেলার ৫০ জন কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারের মাঝে উপহার সামগ্রী ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এসময় ফরিদপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জেলায় ৫০ জনকে উপহার সামগ্রী ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা করা হয়। উপহার সামগ্রী তুলে দেন পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামাুন। এর মধ্যে ৫ জন করোনাকালীন সময়ে এবং ৪৫ জন জেলায় কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।