৬০ কিমি রাস্তা ধাওয়া করে গরু চোর চক্রের ৩ সদস্যকে ধরলেন ওসি-তানভীরুল
ইব্রাহিম সুজন, জেলা প্রতিনিধি, নীলফামারী:নীলফামারীতে ৬০ কিমি রাস্তা ধাওয়া করে আন্তঃজেলা গরু চোরচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় একটি চোরাই গরু উদ্ধার করা হয়। পরে উদ্ধারকৃত গরুটির প্রকৃত মালিক শনাক্ত করে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ কুন্দ মালঞ্চ এলাকার খায়রুজ্জামানের ছেলে মো. বাবুল (৩২), মাগুড়া জেলার শ্রীপুর তাড়াউডিয়াল উত্তরপাড়া এলাকার আহাদ আলী খানের ছেলে মো. ওয়াসিম খান (২২) ও নাটোরের সিংড়া উপজেলার মহেশচন্দ্রপুর এলাকার মনতাজের ছেলে মোঃ নাসির (২৪)। তাদের সবার বিরুদ্ধে জুয়া ও চুরির একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
বুধবার(৬সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযানের কথা জানান পুলিশ সুপার গোলাম সবুর। প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৪ টার দিকে নীলফামারীর কাজীরহাট সংগলশী এলাকা থেকে একটি সাদা পিকআপে করে গরু চুরি করে সৈয়দপুরের দিকে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন চোর। বিষয়টি জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯
নাম্বারের মাধ্যমে নীলফামারী সদর থানাকে জানান স্থানীয় লোকজন। পরে নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নীলফামারী সার্কেল মোস্তফা মঞ্জুরের নেতত্বে ৪টি আভিযানিক টিম তাৎক্ষনিক ভাবে ৪টি দলে বিভক্ত হয়ে অভিযান পরিচালিত করে। একটি টিম সৈয়দপুর হয়ে পার্বতীপুরের দিকে, একটি টিম সৈয়দপুর হয়ে দিনাজপুরের দিকে, একটি টিম ঢেলাপীর-বড়ুয়া হয়ে পাকের হাট খানসামা থানা এলাকার দিকে ও নীলফামারী সদর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তানভীরুল আলমের আভিযানিক টিমটি সৈয়দপুর হয়ে রংপুরের দিকে রওনা করে। পথে ওসি তানভীরুল আলমের আভিযানিক টিমটি রংপুরের তারাগঞ্জ এলাকায় সংঘবন্ধ চোর চক্রের সাদা রংয়ের পিকআপটি শনাক্ত করে। পরে তারা পিকআপের পিছু পিছু ধাওয়া করেন। বিষয়টি অবগত হওয়া মাত্রই ব্যাকআপ সাপোর্টের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নীলফামারী সার্কেল তার আভিযানিক টিম নিয়ে তাৎক্ষণিক পার্বতীপুর হতে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোর চক্রের সদস্যরা তাদের মাহেন্দ্র পিকআপের গতি আরো বাড়িয়ে দেয়। ওসি তানভীরুল গাড়িটিকে থামানোর জন্য সিগন্যাল প্রদান করলেও আন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্যগরা তা অমান্য করে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ওসি তানভীরুল সাদা পিকআপটির পিছু লেগেই থাকে। পিকআপটি মেডিকেল মোড়, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, জাহাজ কোম্পানীর মোড় হয়ে কুড়িগ্রাম অভিমুখে যাবার একপর্যায়ে রংপুর মহানগরের সাত মাথার মোড় নামক স্থানে চোর চক্রের পিকআপটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পার্শ্বে থাকা বিদ্যুৎ এর খুটির সাথে ধাক্কা লাগে। এরপর চোর চক্রের সদস্যরা আহত অবস্থায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পিছু পিছু ধাওয়া করা ওসি তানভীরুলের আভিযানিক টিমটি তাৎক্ষনিক সাত মাথার মোড়ে ৩ জন অন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্যদেরকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করে। এসময় চোর চক্রের কয়েকজন সদস্য পালিয়ে যায়। পরে উদ্ধারকৃত গরুসহ পিকআপটি রেকারের মাধ্যমে নীলফামারী থানায় নিয়ে আসা হয় ও উদ্ধারকৃত গরুটির প্রকৃত মালিক শনাক্ত করে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ সুপার গোলাম সবুর বলেন, নীলফামারী জেলা পুলিশ সংঘবদ্ধ গরু চোর চক্রের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষন অব্যাহত রয়েছে। ধারাবাহিক সফল অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অভিযান দলটি আরো দক্ষ ও পেশাদারিত্বের প্রমাণ রেখে চলেছে। প্রতিটি অভিযান সফল হওয়ায় জনমনে পুলিশের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে চোরাই উদ্ধার গরুটিকে তার প্রকৃত মালিকের জিম্মায় প্রদান করা হয়েছে। পলাতক আসামীদের শনাক্ত পূর্বক গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
গরুর মালিক আমিনুর রহমান বলেন, আমার এলাকার চোর ছাড়া এই গরু তারা চুরি করতে আসতে পারে না। এলাকার চোরদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনার অনুরোধ করছি। এলাকার কেউ না থাকলে এতোদুর থেকে এসে আমার কোন ঘরে গরু আছে তারা তো সেটা জানতে পারবে না।