১৭ May ২০২৪ Friday ১১:৩৩:২৪ PM |
কে হচ্ছেন সভাপতি, সম্পাদক : নেতা-কর্মীদের মাঝে নানা কৌতুহল
পিরোজপুর প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠার তথা স্বাধীনতার পর পিরোজপুরে জেলা শাখার সম্মেলন প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কাল শনিবার। প্রতিষ্ঠার পরে বিভিন্ন সময়ে পিরোজপুর জেলা কমিটি গঠিত হলেও কোন সম্মেলন হয়নি। সর্বশেষ পিরোজপুর জেলা যুবলীগের কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১০ সালে। ১৪ বছর আগে গঠিত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা যুবলীগের অনেক নেতারা ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েছেন এবং গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন।
দীর্ঘ বছর পরে পিরোজপুর যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে পদ প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতাসহ দীর্ঘদিনের পদ বঞ্চিত যুবনেতাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সবাই আশা করছেন সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি গঠিত হবে। নিস্ত্রিয় হয়ে পড়া যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব আসবে।
শনিবারের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। আর সে অধিবেশনে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষনা করা হবে এমন প্রত্যাশা নেতা-কর্মীদের।
এদিকে, কে হচ্ছেন জেলা যুবলীগের নতুন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে সাধারণ নেতাকর্মীরা চান দীর্ঘদিনে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা ত্যাগী, শিক্ষিত, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বদানকারীরা নতুন কমিটিতে আসুক। সেখানে যেন কোন টেন্ডারবাজ, মাদকসেবি বা মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী যুবলীগের নেতৃত্বে না আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা যুবলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন ১০ জন।
পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগে বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল, পিরোজপুর-১ আসনের পরপর দুইবারের নির্বাচিত এমপি এবং সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং পিরোজপুরের সাবেক মহিলা এমপি (সংরক্ষিত আসন), প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচী প্রয়াত শেখ এ্যানি রহমান এ তিনটি ধারায় বিদ্যমান। তিন গ্রæপের মধ্যে অনেকটা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে একেএমএ আউয়াল গ্রæপ। তবে শ ম রেজাউল করিম পর পর দুইবার এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এবং বিগত দিনে মন্ত্রী থাকায় তারও একটি বৃহত্তম বলয় সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে প্রয়াত মহিলা এমপি শেখ এ্যানি রহমানের ছেলে শেখ খালিদ অরিন্দম তান জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হওয়ায় মায়ের সময়ের গ্রæপটি ধরে রেখেছেন।
এদিকে, ১৪ বছর আগে গঠিত পিরোজপুর জেলা যুবলীগের কমিটি প্রায় পুরোটাই ছিল একেএমএ আউয়াল সমর্থিত নেতাদের নিয়ে। সেক্ষেত্রে আগামী কমিটিতেও একেএমএ আওয়াল সমর্থিত অংশের পদ প্রত্যাশীরা ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগসহ কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতাদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল ও তার ছোট ভাই কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মশিউর রহমান মহারাজ কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ এর সাথে দেখা করেছেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে।
একেএমএ আওয়াল সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- সভাপতি পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক, পিরোজপুর সরকারী সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি-জিএস ও বর্তমানে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আক্তারুজ্জামান মানিক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইরতিজা হাসান রাজু। এ গ্রæপের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন, পিরোজপুর সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর মুজিব অভি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসান আম্মান লিটন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর সরকারী সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস কে.এম.ডি মেজবাউদ্দিন সাবু, পিরোজপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি আবু সাঈদ।
অন্যদিকে, পিরোজপুর-১ আসনের এমপি সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সমর্থিতরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরাও লবিং, দৌঁড়ঝাপ ও প্রচারণায় পিছিয়ে নেই। শ ম রেজাউল করিম পর পর দুই বার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এবং সদ্য সমাপ্ত পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার ঘনিষ্ট অনুসারী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় এ গ্রæপের নেতারাও বেশ চাঙ্গা। এ গ্রæপের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সভাপতি পদে প্রার্থী বর্তমান জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা জাহিদ হোসেন পিরু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক, কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. কামরুজ্জামান খান শামীম। সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পিরোজপুর সরকারী সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি এবং সদ্য বিজয়ী পিরোজপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম বায়েজীদ হোসেন। এছাড়া এস এম বায়েজীদ হোসেনের মাথার ওপর হাত রয়েছে পিরোজপুর-২ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দীন মহারাজের।
অপর দিকে, প্রয়াত মহিলা এমপি শেখ এ্যানি রহমানের গ্রুপ যা বর্তমানে তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শেখ খালিদ অরিন্দম তান দেখভাল করছেন। এ গ্রæপ থেকে সভাপতি পদে আছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, পিরোজপুর সরকারী সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি-জিএস এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. মাকসুদুর ইসলাম লিটন সিকদার। কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রনেতাসহ বর্তমান কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে তার রয়েছে একটি নিবিড় সম্পর্ক।
সবকিছু মিলিয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ন পদে কোন বলয় বা গ্রæপ থেকে কে হবেন সেটা নিয়েই নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে যত জল্পনা কল্পনা।
পিরোজপুর জেলা যুবলীগের সম্মেলন ও নতুন কমিটির বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের এক প্রসিডিয়াম সদস্য বলেন, যেহেতু যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। তিনি যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের নিয়েই পিরোজপুর জেলা যুবলীগের কমিটি দিবেন। সেখানে কে কোন গ্রæপ বা বলয়ের সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়।
পিরোজপুর যুবলীগে কেমন নেতৃত্ব দরকার এ বিষয়ে জেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান জানান, সংগঠন দরদী এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে থেকে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল এমন সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকে যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব আসুক এটাই চাই।
যুব নেতা এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান সোহাগ বলেন, দক্ষ, যোগ্য, ভদ্র এবং সাংগঠনিক নেতাদের দরকার যুবলীগের নতুন নেত্বত্বে।
যুবলীগ নেতা মো. আনিসুল হক বলেন, যোগ্য, সৎ, কর্মীবান্ধব নেতাদের নিয়ে যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব হোক এটাই প্রত্যাশা।
জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা জাহিদ হোসেন পিরু বলেন, বর্তমান মানবিক যুবলীগ গড়ার লক্ষে সৎ, যোগ্য, সমাজের কাছে গ্রহনযোগ্য নেতৃত্ব দরকার যুবলীগে। মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী বা টেন্ডারবাজ যাতে কোনভাবেই যুবলীগের নেতৃত্বে না আসে সেদিকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের খেয়াল রাখা উচিৎ।
পিরোজপুর-১ আসনের এমপি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘদিন পর পিরোজপুর জেলা যুবলীগের সম্মেলন হচ্ছে, এটা অভাবনীয় আনন্দের। যুব সমাজের মধ্যে স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণের সাড়া পাচ্ছি। আশাকরি ৫০ হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করবে। আমি চাই, এমন নেতৃত্ব আসুক, যারা ব্যক্তি ও পরিবারের কর্মচারী নয়, প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করবে মনে প্রাণে। কোন ভাবেই যেনো মাদকাসক্ত, চরিত্রহীন, চাঁদাবাজ না হয়। ক্লীন ইমেজের জনপ্রিয় যুবকদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হোক পিরোজপুর জেলা যুবলীগ।
প্রয়াত মহিলা এমপি শেখ এ্যানি রহমানের ছেলে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শেখ খালেদ অরিন্দম তান বলেন, বিগত দিনে যারা রাজপথে থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করেছে, আওয়ামী লীগের সরকারেরর উন্নয়নের কথা, আওয়ামী লীগের কথা জনসাধারণের মধ্যে বলেছেন। আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করেছে এ রকম ত্যাগী যুবকদের নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছি।
জেলা যুবলীগের সম্মেলন ও নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে কথা বলার জন্য পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল এর মোবাইল ফোনে কল করা তিনি এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানিয়ে কল কেটে দেন।
এদিকে, জেলা যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে জেলা শহরের সর্বত্র ছেড়ে গেছে নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেষ্টুন, বড় বিলবোর্ডে। শহরের বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে মোড়ে তৈরী করা হয়েছে তোরণ।
সম্মেলন উপলক্ষে পিরোজপুর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৈরী করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ এবং তোরণ। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা কয়েকদিন ধরে পিরোজপুরে এসে সম্মেলন আয়োজনের বিষয়টি মনিটরিং করছেন।
জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামান জানান, সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিমেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ এবং প্রধান বক্তা থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাইনুল হোসেন খান নিখিল এমপি।
সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল, পিরোজপুর-১ আসনের এমপি শ ম রেজাউল করিম, পিরোজপুর-২ আসনের এমপি মো. মহিউদ্দীন মহারাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কানাইলাল লাল বিশ্বাস, পিরোজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সালমা রহমান, পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র মো. হাবিবুর রহমান মালেক। বক্তব্য রাখবেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রসিডিয়াম সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদ, মো. জসিম মাতুব্বরসহ কেন্দ্রীয় যুবলীগসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন জেলা যুবলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলু এবং সঞ্চালনা করবেন সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী জানান, স্বাধীনতার পর তথা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পর পিরোজপুরে এটাই জেলা যুবলীগের প্রথম সম্মেলন। তাই সম্মেলনকে ঝাকজমকপূর্ন এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতা-কর্মীর সমাগম ঘটানো হবে। সম্মেলনে ৫০ হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতি হবে বলে তিনি জানান।
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |