লাইফস্টাইল ডেস্ক
গত দেড় বছর ধরে চলা করোনা সংক্রমণের কারণে বিশ্বব্যাপী স্ট্রেস হয়ে গেছে আমাদের জীবন যাপনের অনিবার্য অংশ। গণমাধ্যম প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যুর খবর প্রচার করছে। আশপাশের চেনা মানুষগুলোর কেউ কেউ মৃত্যুর কোলে সমর্পিত হচ্ছে। কোনো কোনো পরিবারের একাধিক সদস্য করোনায় মারা গেছেন। সেই মৃত্যু ভয়-আতঙ্কে অসংখ্য মানুষ বছরব্যাপী ঘরবন্দী। কিন্তু ঘরবন্দী থেকে মৃত্যুকে কি উপেক্ষা করতে পেরেছে কেউ? বরং আকাশচুম্বী ভবনের নিরাপদ কুঠরিতে থেকেও করোনা সংক্রমিত মৃত্যু হয়েছে অনেকের। অন্যদিকে এই করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যারা নির্ভার-নিরুদ্বেগ সাহসী জীবন যাপন করেছেন তাদের কোনো ভয় ছিল না। স্ট্রেস ছিল না। এদের মধ্যে অনেকেই মেডিটেশনের মাধ্যমে ভয়কে জয় করেছেন। পেয়েছেন প্রশান্তির খোঁজ।
বিশ্বজুড়ে এখন প্রায় ৫০ কোটি মানুষ নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন করেন। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ নিয়ে যখন একজন মানুষ ধ্যানমগ্ন হন বা মেডিটেশন করেন তার ট্রেসের মাত্রা কমে যায় শতকরা ৬০ ভাগ। গবেষণার তথ্য, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার অন্তত ৮৭ ভাগ কমে গেছে যখন তারা মেডিটেশন করেছেন। শতকরা ৯১ ভাগ মানুষই মেডিটেশন করে বাদ দিয়ে পরে ঘুমের ওষুধ বা স্লিপিং পিল খাওয়ার উপর নির্ভরশীল হয়েছেন। কোনো ওষুধ বা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে এমন সাফল্য কখনো দেখা যায়নি। এই ধ্যান বা মেডিটেশন হল দম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজের মনের ভিতর ডুব দেওয়া, ইতিবাচক বিষয় নিয়ে ভাবা, সুখ বা সাফল্যের কথা চিন্তা করা। মেডিটেশনের মাধ্যমে সাফল্য, প্রশান্তি ও নিরাময় লাভ করেছেন লাখ লাখ মানুষ। প্রায়োগিক কার্যকারিতায় বিশ্বজুড়ে মেডিটেশন হয়ে উঠেছে নিরাময়ের বিকল্প পদ্ধতি, সাফল্যের অব্যর্থ প্রক্রিয়া ও প্রশান্তির লাগসই টেকনিক। এ জন্য বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও লাখ লাখ মানুষ ধ্যান বা মেডিটেশন করে নিজেদের জীবন-যাপনকে করে তুলেছেন অর্থবহ। এসব প্রেক্ষাপট সামনে রেখে বাংলাদেশে আগামী ২১ মে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস পালিত হয়।
বাংলাদেশে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস পালনের মূল উদ্যোক্তা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। এই সংগঠনের উদ্যোগে আগামী শুক্রবার ২১ মে ফাউন্ডেশনের সেল, প্রিসেল, শাখা, সেন্টারসহ দুই শতাধিক ইউনিটে সাংগঠনিকভাবে এবং ঘরে ঘরে ব্যক্তিগতভাবে লাখ লাখ মানুষ সম্মিলিত মেডিটেশনে অংশ নেবেন। এদিন বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় সারা দেশে এবং দেশের বাইরে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন শাখা ও ভার্চুয়াল সেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ধ্যানমগ্ন হবেন। মেডিটেশন দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘নিয়মিত মেডিটেশন, সুস্থ সফল সুখী জীবন’।
মনীষীদের ভাষায়, মানবজীবনের একক হচ্ছে প্রশান্তি। প্রশান্তি ছাড়া অর্থ-বিত্ত, খ্যাতি, সাফল্য সবকিছুই অর্থহীন। সেই প্রশান্তির খোঁজ মিলছে মেডিটেশনে। ইতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ সমস্যা ও দুর্দশাগ্রস্ত প্রাত্যহিক জীবন বদলে ফেলেছেন। নিরাময় লাভ করেছেন দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে। কাক্সিক্ষত সাফল্য এসেছে হাতের মুঠোয়। ২০১৮ সালের এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৫২ ভাগ প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মীদের মেডিটেশনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কারণ, তারা দেখছে, মেডিটেশন করা কর্মীর উৎপাদন ক্ষমতা মেডিটেশন না করা কর্মীর চেয়ে শতভাগ বেশি। বাংলাদেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও সেদিকে ঝুঁকছে।
বোস্টনের মাইন্ড বডি মেডিকেল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডা. হার্বার্ট বেনসন তার সাড়া জাগানো বেস্ট সেলার ‘রিলাক্সেশন রেসপন্স’ বইয়ের পর সম্প্রতি ‘ব্রেকআউট প্রিন্সিপাল’ নামে আরেকটি বই লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, মনকে শিথিল করার মাধ্যমে কীভাবে একজন মানুষ তার মানসিক সামর্থ্যকে তুঙ্গ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ দৈনন্দিন চিন্তাভাবনার জঞ্জাল এবং মাথা খারাপ করে ফেলা সমস্যার বাইরে এসে যদি ভাবা যায়, কিছুটা সময় যদি অন্য চিন্তায় ডুবে থাকা যায়, তাহলে চিন্তার রাজ্যে তৈরি হয় সেই স্বচ্ছতা আর স্থিরতা, যা দেয় সঠিক সিদ্ধান্ত ও সমাধান।
আধুনিক মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের পথে বড় অন্তরায় স্ট্রেস। হৃদরোগ, ক্যান্সার, ফুসফুসের জটিলতা, লিভার সিরোসিসসহ আরও নানা রোগের মূলে রয়েছে স্ট্রেস। এই স্ট্রেস মুক্তির জন্য মেডিটেশন এখন সারা বিশ্বে সমাদৃত। স্ট্রেস মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের শত শত হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রতিরোধমূলক যত্ন হিসেবে রোগীদের যোগ-মেডিটেশন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। স্ট্রেস থেকে মুক্তি না পেলে শরীর-মন-পেশা সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজেই এত সবের ক্ষতি না করে প্রতিদিন নিয়মিত মেডিটেশন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিশ্ব মেডিটেশন দিবস এই বার্তাটিই নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশে মেডিটেশন চর্চার ইতিহাসে টানা ২৯ বছর ধরে একক নেতৃত্ব দিচ্ছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। ১৯৯৩ সাল থেকে উদ্ভাবক কর্তৃক এককভাবে পরিচালিত কোয়ান্টাম মেথড মেডিটেশনের চার দিনের কোর্সটির ৪৭৪ টি ব্যাচ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে যুগান্তকারী ৪৭৫ তম ব্যাচ। মেডিটেশন শেখায় আগ্রহীরা সেই বিরল সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন।
সারাবাংলা/আরএফ