চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর লাখো মানুষের দৈনন্দিন দুঃখ-দুর্দশার লাঘব হলো অবশেষে। সংস্কার কাজ শেষ হওয়ায় কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত কালুরঘাট সেতু দিয়ে প্রায় ১৫ মাস পর রোববার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে নগর থেকে ছুটছে গাড়ি। এতে ওই অঞ্চলের মানুষের মুখে ফুটেছে হাসি।
সংস্কারকাজকে ঘিরে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ঐতিহ্যবাহী সেতুতে বন্ধ ছিল যান চলাচল।
পরীক্ষামূলকভাবে যান চলাচল উন্মুক্তই রাখা হয়েছে। কোনো টোল রাখছে না রেলওয়ে। সর্বোচ্চ ৮ ফুট উচ্চতার সব ধরণের যানবাহন চলাচল করছে। তবে চলতে পারছে না ট্রাক-বাসের মতো ভারী যান।
এর আগে, ২০২৩ সালের ১ আগস্ট জরাজীর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী ট্রেন চলাচলের জন্য সংস্কার কাজ শুরু করে রেলওয়ে। ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ মাসে সেতুটির সার্বিক সংস্কারকাজের দায়িত্ব পায় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ২০২৩ সালের ১৬ জুন চুক্তি সইয়ের ৩ মাসের মধ্যে সেতুটি ট্রেন চলাচলের উপযোগী এবং ৮ মাসের মধ্যে মানুষ পারাপার ও সব ধরণের যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যানবাহন চলাচলের কাজ শেষ করতে ১৬ মাসেরও বেশি সময় ব্যয় করেছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
সেতু দিয়ে যান চলাচলের জন্য শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘টোল ছাড়াই আপাতত যানবাহন চলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তবে বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতু দিয়ে বড় ট্রাক ও বাস চলাচল করতে পারছে না। ভূ-সম্পত্তি বিভাগ শিগগিরই রেলসেতু দিয়ে চলা যানবাহন থেকে টোল আদায়ে উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করবে।’
অবশ্য ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেতুটি দিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে মানুষ ও যানবাহন চলাচল শুরু হয়ে যায়। তবে সড়ক সংস্কার কাজ শতভাগ সম্পন্ন না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে সাময়িকভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হতো। ২০২৩ সালে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ার পর কর্ণফুলী নদী হয়ে বোয়ালখালী উপজেলায় যাতায়াতের জন্য ফেরি সার্ভিস চালু করেছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কালুরঘাট সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও ভারী যানবাহনের জন্য ফেরি সার্ভিস চালু থাকবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ।
মূলত দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে আসার পরও নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়ায় পুরাতন কালুরঘাট সেতু সংস্কারের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে নির্মিত কালুরঘাট সেতুটি বহু আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়।বুয়েটের পরামর্শে সেতুটি সংস্কার করা হয়। ভারী ও দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল করতে সেতুর পিয়ারগুলোর নদীর পানির নিচে প্রায় ৬০ হাজার জিও ব্যাগের মাধ্যমে বালি ফেলাসহ মানুষের যাতায়াতে ওয়াকওয়ে এবং রেলপথের ওপর সড়ক কার্পেটিং এ বিশেষ নকশা প্রণয়ন করে রেলওয়ে। নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়নের কারণে একমুখী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
কালুরঘাট সেতু দিয়ে বর্তমানে কক্সবাজার পর্যন্ত দৈনিক তিন জোড়া ট্রেন ও দোহাজারী পাওয়ার প্ল্যান্টের জ্বালানিবাহী ট্রেন চলাচল করে। তবে কালুরঘাট সেতু সংস্কার ও কর্ণফুলী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণের পর এই রুটে দৈনিক ২৩ জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে চালু হওয়া রেলওয়ের ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে কক্সবাজার পর্যন্ত আপাতত আরও কয়েকটি ট্রেন যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সেতুতে যানবাহন চলাচলের কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক মো. মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আমরা কালুরঘাট সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের কাজ নভেম্বর মাসের মধ্যেই শেষ করেছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে যানবাহন চলাচলের কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় লেগেছে। সেতুর উপরিভাগের শতভাগ কাজ শেষে রোববার উন্মুক্ত করা হবে। তবে নদীর তলদেশে বালিযুক্ত জিও ব্যাগ স্থাপনের কাজ আগামী শীত মৌসুমে শুরু হবে।