১৭ বিয়ে করা সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত

১৭ বিয়ে করা সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত

যেখানে বদলি, সেখানেই বিয়ে। এভাবেই ১৭ নারীকে বিয়ে করে দেশব্যাপী আলোচিত বরিশাল বিভাগীয় সেই বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কবির হোসেন পাটোয়ারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

চাঁদপুরের মতলব উপজেলার তুষপুর গ্রামের মোশাররফ হোসেন পাটোয়ারীর ছেলে কবির হোসেন এর আগে ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। বন বিভাগের পদ ব্যবহার করে নারীদের ফাঁদে ফেলার অভিযোগে তিনি এর আগেও দুবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। তবে সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির সুপারিশে তিনি চাকরিতে পুনর্বহাল হন।

মঙ্গলবার বিকেলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কবির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপ-বন সংরক্ষক) ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান মিঞাকে।

বরিশাল বিভাগীয় উপকূলীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্তের আদেশ সংক্রান্ত একটি ইমেইল পেয়েছেন।

এ ছাড়া একই দিনে কবির হোসেন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হাফিজ আহম্মেদ বাবলু স্ব-প্রণোদিত হয়ে মেট্রোপলিটন প্রথম আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

আদালতের বিচারক মো. সাদিক আহম্মেদ মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, বিদেশে পড়াশোনা করানো, সরকারি চাকরি দেওয়া, বিমানবালা হিসেবে সুযোগ কিংবা সম্পত্তি দেওয়ার প্রলোভনে প্রতারণা করে আসছিলেন এ বন কর্মকর্তা। তিনি এর আগে ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত থাকাকালীন ১৭টি বিয়ে ও বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

মামলার বাদী অ্যাডভোকেট হাফিজ আহমেদ বাবলু জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন পাটোয়ারী চাঁদপুরের মতলব উপজেলার তুষপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এর আগে ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত থাকাকালে ১৭টি বিয়ে ও বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আসামি কবির হোসেন পাটোয়ারী প্রতিটি বিয়ের বিষয়ে মুসলিম ফ্যামিলি আইনের ১৯৬১ এর ৬ ধারার বিধান লঙ্ঘন করে অধ্যাদেশ ৬ (৫) এর (খ) ধারার অপরাধ সংঘটিত করেছেন। এ ছাড়া প্রথম বিয়ের পর তা গোপন রেখে এক এক করে ১৭টি বিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দেশীয় সংস্কৃতি এবং আমাদের সমাজব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে গুরুতর অপরাধ সংগঠিত করেছেন।’

আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রাজিব মজুমদার জানান, আদালত অ্যাডভোকেট হাফিজ আহম্মেদ বাবুল দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২০ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বন কর্মকর্তা কবির হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর কবির হোসেন পাটোয়ারীর বিচারের দাবিতে বরিশাল নগরীর কাশিপুর বন সংরক্ষক কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী নারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় ঢাকার বাসিন্দা নাজনীন আক্তার শীলা, নারায়ণগঞ্জের সোনিয়া আক্তার, খুলনার নাসরিন আক্তার দোলনসহ ১৭ নারী তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন তারা। (সূত্র= আমাদের সময়)

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Explore More Districts