সময়টা ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে তিনটার কিছু পর। সমুদ্র শহর কক্সবাজারে আসলো সাদা জিপ । কয়েক দিনের ঘুমহীন লাল চোখ নিয়ে ছাদখোলা জিপের সামনে দাড়িয়ে এক বীর। জিপের সম্মুখে অমলিন লাল সবুজের পতাকা। সকাল থেকে সেই সাদা জিপটি ছুটে আসছিলো। তখন রাস্তার দু’পাশে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে হাজার হাজার মানুষ। তাদের কারো চোখে জল, কারো বুকে উচ্ছাসের রং, কারো কণ্ঠে জয়ের নিনাদ, সেই সাদা জিপটি যেন বহন করে চলেছে দিগন্ত প্লাবিত এক নতুন ইতিহাস।
এক সময় সাদা জিপটি থামে কক্সবাজারের তৎকালীন পাবলিক হল মাঠে। তখন কানায় কানায় পূর্ণ মাঠ, মুহুর্তেই জয় বাংলা ধ্বনিতে একাকার।

অতঃপর পাবলিক হল মাঠের গোল চত্বরে সেই সাদা জিপ থেকে নেমে আসা গ্রুপ কমান্ডার আব্দুস সোবহান আকাশের উঁচুতে উড়ালো সবুজের বুকে লাল রঙ খচিত পতাকা। আর ঘোষণা দিলেন ‘আজ থেকে কক্সবাজার হানাদারমুক্ত’। সেদিনই কক্সবাজারের মানুষ বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করেছিলো।
বার্তা২৪.কম-কে সেদিনের কথা বলতে গিয়ে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে এমনটাই বর্ণনা দিচ্ছিলেন সেই শত্রুমুক্ত দিবসের অন্যতম অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ।
তিনি জানান, ‘১২ ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় চারটি বাস ও একটি সাদা জিপে করে ৪০ জন বীরমুক্তিযোদ্ধা উখিয়ার রত্নাপালং হাইস্কুল ক্যাম্প থেকে গ্রুপ কমান্ডার আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং বিকেল সাড়ে ৩ টার কিছু পর কক্সবাজার পৌঁছাবার পরই পতাকা উত্তোলনের করে আব্দুস সোবহান কক্সবাজার কে শত্রুমুক্ত ঘোষণা দেন। এভাবেই রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা শেষে, হাজারও মানুষের কান্না, স্বজন ও আত্মীয় হারানোর বেদনার সাগর পাড়ি দিয়ে বিজয়ের ঢেউ স্পর্শ করেছিল সাগরতীরে।