লাইফস্টাইল ডেস্ক
বিশ্ব হার্ট ফেডারেশনের মতে, প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় হৃদরোগে। প্রতিবছর ১ কোটি ৭১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগে, যা ক্যানসার, এইচআইভি এইডস ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সম্মিলিত মৃত্যুর চেয়েও বেশি। হৃদরোগ ও স্ট্রোক সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট বা হৃৎপিণ্ড দিবস পালন করা হয়। ধূমপান বর্জন, প্রতিদিন ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয় এই দিন উপলক্ষে।
হৃদরোগে মৃত্যুর সংখ্যা এত বেশি হওয়ার কারণ অতিরিক্ত খাওয়া, ব্যায়াম না করা, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজ।
বিশ্ববাসীকে হৃৎপিযন্ত্রসহ, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও সুস্থ জীবনযাপন শেখানোর উদ্দেশ্যে ২০০০ সালে বিশ্ব হৃৎযন্ত্র দিবস পালন শুরু হয়। ২০১২ সালে বিশ্বনেতারা ঠিক করেন তারা ২০২৫ সালের মধ্যে হৃদরোগের মত অসংক্রামক ব্যাধি কমাতে ভূমিকা রাখবেন।
আজ বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে চলুন জেনে নেই হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক উপসর্গ ও এর ঝুঁকি রোধে করণীয় সম্পর্কে। প্রাথমিক উপসর্গ জানলে জটিলতার ঝুঁকি এড়ানো অনেকটাই সহজ।
হৃদরোগের উপসর্গ
বুকে চাপ চাপ ব্যথা, বুকের এক পাশে বা পুরো বুকজুড়ে অসহ্য ব্যথা। বেশিরভাগ সময় বুকে ব্যথার তীব্রতার জন্য শরীরের অন্য অংশে ব্যথা টের পাওয়া যায় না। অনেকসময় ব্যথা শরীরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে চলে যেতে পারে যেমন, বুক থেকে হাতে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত বাম হাতে ব্যথা হলেও দুই হাতেই ব্যথা হতে পারে। মাথা ঘোরা, ঝিমঝিম করা ও বমি ভাব। ঘাম হওয়া। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, বুক ধড়ফড় করা বা বিনা কারণে অস্থির লাগা।
সর্দি বা কাশি হওয়া।
হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে করণীয়—
আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া
যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে সেসব খাবার খেতে হবে বেশি করে। এসব খাবারের কারণে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। শিম, মটরশুঁটি, ডাল জাতীয় শস্য এবং ফলমূল, আলু, মূলা, গাজর, আটা ও ব্রাউন রাইসে প্রচুর আঁশ রয়েছে।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ
হৃৎপিযন্ত্র সুস্থ রাখতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। এতে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ার ভয় থাকবে না। ফলে কমবে হৃদরোগের ঝুঁকি। চিজ, দই, লাল মাংস, মাখন, কেক, বিস্কিট ও নারকেল তেলে প্রচুর পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এগুলো খাওয়া নিয়ন্ত্রণে করতে হবে তাই। স্যাচুরেটেড ফ্যাট নেই যেসব খাবারে তার মধ্যে রয়েছে, তেল সমৃদ্ধ মাছ, বাদাম ও বীজ। আর রান্নায় জলপাই বা সূর্যমুখির তেল ব্যবহারে উপকার পাবেন।
লবণ ও চিনি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করুন
লবণ বেশি খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায় যার ফলে বাড়ে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি। একজন ব্যক্তি দিনে ছয় গ্রাম বা এক চা চামচ লবণ খেতে পারবেন। সেই সঙ্গে কমাতে হবে চিনি বা মিষ্টি খাওয়ার পরিমাণও।
ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে। তাই হৃদরোগ ঠেকাতেও এসব খনিজ ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেই এসব ভিটামিন ও খনিজ পাওয়া সম্ভব। প্রতিদিন পাঁচটি ফল বা সবজি খেতে হবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
হৃদপিযন্ত্রের সুস্থতার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। ওজন যদি বেশি হয় তবে তা নিয়ন্ত্রণে ক্যালরি গ্রহণ কমান। আবার চিনি, লবণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার কম খেলে ও ভিটামিন এবং মিনারেলযুক্ত খাবার বেশি করে খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও কম। ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নজর রাখতে হবে কোমরের মাপের দিকেও। পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩৭ ইঞ্চি আর নারীর ক্ষেত্রে ৩২ ইঞ্চির বেশি হতে পারবে না। তাই খাবার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামও করতে হবে।
সারাবাংলা/এসবিডিই