হত্যা মামলার আসামীদের হুমকি, আতঙ্কে শাকিলের পরিবার
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহম্মেদ হত্যার ঘটনায় আসামিদের হুমকিতে আতঙ্কে রয়েছে তাঁর পরিবার। মামলার প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ নয়জন কারাগারে থাকলেও অন্য আসামি ও তাঁদের স্বজনেরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।
পরিবারের অভিযোগ, মামলার প্রধান আসামি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তাঁর ভাড়াটে লোকজন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাকিলকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন আসামিরা। মামলা থেকে আসামিদের বাদ দিতে কৌশলে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের লোকজনের।
নিহত বড় ভাই ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আলম জানান, আসামিদের দেওয়া হুমকিতে প্রতিনিয়তই আতঙ্কে আর ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। মামলার প্রধান আসামিসহ নয়জন গ্রেপ্তার হলেও এখনো অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। আসামি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়তই হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
সাঈদ আলম ও তার পরিবারের লোকজন দিনে ও রাতে আসামিদের ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। কেন তাদের নামে মামলা করা হলো! কেন তাদের আসামি করা হলো এ নিয়ে তাঁরা প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।
শাকিলের স্ত্রী কাকুলী আহমেদ বলেন, খুব নৃশংসভাবে আমার স্বামীকে তারা কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার দুই সন্তান বাবার শোকে পাগল হয়ে গেছে। এখন আবার বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে আমাদের ছাড়বে না। পরিবারের ছোট ছোট সন্তান নিয়ে আমরা অসহায় দিনযাপন করছি।
শাকিলের মা শাহিনুর বেগম বলেন, আমরা কেউই রাতে বের হতে পারি না, দিনেও অনেক ভয়ে বের হতে হয়। কারণ তারা আমাদের অনেক হুমকি দিচ্ছে। কয়েকজন আসামি ধরা হলেও বাকিরা পলাতক রয়েছে। আমরা অনেক আতঙ্কে আছি, কখন তারা কী করে! আমার নির্দোষ ছেলেটাকে রফিকুল ও তার লোকেরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। যারা আমার বুক খালী করেছে তাদের আমি বিচার চাই। আমাদের অবস্থা শাকিলের মতো করবে বলে হুমকি দেয় তারা। অসহায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছি আমরা।
স্থানীয়রা বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে সকালবেলা এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ভানোর ইউনিয়নের মানুষ চেয়ারম্যানের লোকজনের অত্যাচারে অতিষ্ট। বিএনপির রাজনীতি থেকে উঠে আসা রফিকুল ইসলাম আওয়ামীলীগের যোগদান ও চেয়ারম্যান হওয়ার পর ভানোর ইউনিয়নকে নিজস্ব সম্প্রতি মনে করেন তিনি। একের পর এক অপকর্মের সাথে লিপ্ত থাকেন। কিছু বলতে গেলেই তার পোষা সন্ত্রাসীরা আমাদের ভয়ভীতি দেয়। জেল থেকে বসে যেভাবে তার লোকজন দিয়ে নিহতের বড় ভাই সাঈদ আলম ও তার পরিবারকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে না জানি জামিনের পর ওই পরিবারটির কি অবস্থা হবে।
বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আনাম জানান, ঘটনার পরপরই আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ প্রতিনিয়তই এলাকায় খোঁজ-খবর নিচ্ছে এবং বিষয়টি নজরে রাখছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে আদালতে আত্মসমার্পন করে জামিন চাইতে গেলে জামিন না মঞ্জুর করে মামালার প্রধান আসামী রফিকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদ। কারাগারে নেওয়ার সময় আদালতে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে সংবাদ কর্মীদের উপর হামলার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যানের সাথে থাকা লোকজন।