স্বাধীনতার পর থেকে শুনি ব্রীজটি হবে, কিন্তু আজও হয় না
ইব্রাহিম সুজন, জেলা প্রতিনিধি, নীলফামারী:নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত। ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকোটি। পাকা সেতু নির্মাণের দাবিতে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নীলফামারীর সদর লক্ষীচাপ ইউনিয়নের বুড়িখোড়া নদীর ওপর বসুনিয়ারডাঙ্গা গ্রামের বাঁশের সাঁকোটি অবস্থিত।
হাজারও প্রতিশ্রুতির পরেও বুড়িখড়া নদীর ওপর পাকা সেতু নির্মাণ হয়নি। নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোই ভরসা। পাকা সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে সাইকেল ও মটরসাইকেল নিয়ে হেঁটে সাঁকো পার হচ্ছেন। অনেকে আবার পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও পায়ে হেঁটে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন। সাবধানে চলাচল করছেন সবাই। কারণ, সাঁকোর ওপর থেকে অনেকে পড়ে আহত হয়েছেন। একটু অন্যমনস্ক হলে যেকোনো সময় পড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ, কাচারী, শিশাতলী, জংলীপাড়া, দুবাছুরি, বল্লমপাঠ, কচুয়া ও দাঁড়িহারা জলঢাকা উপজেলার ডিয়াবাড়ী ও শিমুলবাড়ী গ্রামের মানুষজন প্রতিদিন নীলফামারী জেলা শহর, ডোমার উপজেলা শহর ও জলঢাকা উপজেলায় যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া এই তিন উপজেলা শহরে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। নদীর ওপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দুই ঘাটের সংযোগ রক্ষা করে। ওই বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো দিয়ে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা যাতায়াত করে থাকেন। পাকা সেতু না থাকায় ভীষণ সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা।
জংলীপাড়ার বাসিন্দা বিমল চন্দ্র রায় বলেন, শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে কোনও রকম নদী পারাপার হলেও বর্ষাকালে নদী জলে ভরে থাকায় প্রচন্ড সৌতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এই স্থানে একটি সেতুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিয়েও কোনো সুফল হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ললিত চন্দ্র রায় একরাশ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, গত বছর আমার ছেলে বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। আমরা অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করি। কৃষকদের যতো মালামাল এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয়।
তিনি আরও বলেন,‘আমাগো দুঃখকষ্টের কথা কেউ শোনে না। বর্ষার সময় সাঁকোটি পার হওয়া অনেক কষ্টের। নদীভরা পানি থাকে। তখন সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। আমগরে কষ্ট কেউ বুঝে না। বহু বছর ধরে শুনি, এখানে সেতু হবে। কিন্তু কখনো আর সেতু হলো না। আর হবে কি না, সেটাও জানি না।’
বসুনিয়ারডাঙ্গা গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, স্বাধীনতার পর ভারত থেকে ফিরে আসার পর শুনি ব্রীজটি হবে, কিন্তু আজও হয়না। প্রতিবার ভোটের সময় ওই ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণের বিষয়টি ওঠে। ভোট ফুরালে আর কারও দেখা মেলেনা। পাকা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে এলাকার সাংসদ, বিধায়কদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু কারও কোনও হেলদোল নেই।
মটরসাইকেল আরোহী বিপ্লব রায় বলেন, আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরী করি। আমার বাসা নদীর ঐ পাড়ে তাই আমাকে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় মটরসাইকেল নিয়ে পার হওয়া যায় না। ছেলে মেয়েরা বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যেতে পারে না। সেতুর অভাবে রোগীদের পড়তে হয় সবচেয়ে দুর্ভোগে।
কাচারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিতা রানী রায় জানান, কষ্ট করে বিদ্যালয়ের সাঁকোর ওপর দিয়ে পারাপার হতে হয়। অনেক সময় পানিতে পড়ে আমাদের বইখাতা নষ্ট হয়ে যায়।
লক্ষীচাপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, প্রতিদিন এই সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার লোক যাতায়াত করে থাকেন। তিনি বলেন, ব্রীজটি হলে হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে আমি এলজিইডি অফিসে অনেকবার যোগাযোগ করেছি।
নীলফামারী স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ কবির বলেন, একটি প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। ওই স্থানে একটি সেতু করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি খুব দ্রুত হয়ে যাবে।