সেই কমদামে ক্রয়ের পুরোন কৌশলে চামড়ার আড়তদাররা, সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষিত

সেই কমদামে ক্রয়ের পুরোন কৌশলে চামড়ার আড়তদাররা, সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষিত

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
চলতি বছর চামড়ার দাম পাঁচ টাকা বাড়ানো হলেও সরকার নির্ধারিত দরে কাঁচা চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। গরুর চামড়ার দাম অনেকটা গত বছরের মতোই। তবে অন্য বছরগুলোর মতো এবারও ছাগলের চামড়া কিনতে অনীহা দেখিয়েছেন তারা। কমদামে চামড়া ক্রয়ের পুরোন কৌশলেই রয়েছে চামড়ার আড়তদাররা।
ঈদুল আজহার পর কোরবানির পশুর চামড়া যেতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে। তবে সরকারের নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন আড়তদাররা। লোকসানের আশঙ্কায় তারা চামড়ার দাম কমিয়ে দিচ্ছেন, ফলে চামড়া বিক্রেতা ও ফড়িয়াদের সঙ্গে চলছে টানাপড়েন ও দরকষাকষি।
উল্লেখ্য, চলতি বছর হেমায়েতপুরের আড়তগুলোতে চার লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার লক্ষ্য রয়েছে। পাশাপাশি, ঈদের পর ১০ দিন দেশের অন্যান্য জেলার চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে না।চামড়ার দাম নির্ধারণ করে সরকার গত ২৫ মে এক নির্দেশনা দেয়। সেখানে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সর্বনিম্ন দামে ঢাকায় গরুর কাঁচা চামড়া ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫০ টাকা ঠিক করা হয়েছে।
খাসির চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা ও বকরির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এ বছর বেশির ভাগ গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ছোট চামড়ার দাম ৬০০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। গত বছরও গরুর কাঁচা চামড়ার এ রকম দাম ছিল। এ ছাড়া এবার ছাগলের চামড়া প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা, যা গতবারও একই রকম ছিল।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু। চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ট্যানারিমালিকেরা।
গত ২৬ মে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এ ছাড়া ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২২ থেকে ২৭ টাকা ও বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
একাধিক আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, একেকটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনছেন। মাঝারি আকারের গরু কোরবানি হয় বেশি। সেই চামড়া তারা কিনছেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। এ হিসেবে গত বছরের তুলনায় প্রতিটি গরুর চামড়ায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি দাম পাওয়া যাচ্ছে। খুব বড় আকারের চামড়া দেড় হাজার টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এ বছর ছোট গরুর চামড়া বেশি। তবে সার্বিকভাবে চামড়ার সরবরাহ ভালো। তাঁদের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি চামড়ায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দাম রয়েছে। তিনি জানান, চলতি বছর ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ থেকে ছয় লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে। মূলত কাঁচা চামড়ার দাম তথা বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি কাঁচা চামড়া কিনে থাকে।

Explore More Districts