
দেশকে ভালোবেসে যারা নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছেন, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই জীর্ণশীর্ণ ঘরে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছিলেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জাতির সূর্য সন্তানদের কেউ কেউ ভেবেছিলেন, হয়তো এভাবেই কেটে যাবে জীবন। কিন্তু স্বপ্নের মতোই পাল্টে গেছে সেই চিত্র। সারা দেশের ন্যায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জেও ৩৯ জন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে আবাসনের জন্য দেয়া হয়েছে একটি করে বাড়ি। যার নাম করণ করা হয়েছে বীর নিবাস। আর এই বীর নিবাস পেয়ে ভাগ্য বদলেছে জাতীয় বীরদের।
উপজেলায় ১ম ধাপে ১২ টি ২য় ধাপে ২৭ টি দুই দফায় ৩৯ টি বাড়ী পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার। এর মধ্যে কয়েকটি বাড়ীর কাজ এখনো চলমান রয়েছে। প্রতিটি নিবাসের আয়তন ৭৩২ বর্গফুট। একতলার এই বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ (ড্রয়িংরুম), একটি খাবারঘর (ডাইনিং রুম), একটি রান্নাঘর, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও দুটি শৌচাগার রয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে থাকছে একটি উঠান, একটি নলক‚প এবং গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালনের জন্য পৃথক শেড। প্রতিটি বাড়ির নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের পুত্র প্রতিবন্ধী এম এ মতিন পারভেজ বলেন, অভাবের সংসারে এক দুর্ঘটনায় আমার দুইপা হারিয়ে ভিক্ষা করে যা পেতাম তাই দিয়ে সংসার চালানো যেতোনা । ভাঙ্গা ঘরে রাতে ঘুমাতে পারেননি শান্তি-মতো। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের একটা ঠিকানা করে দিয়েছে। আর এই ঠিকানার নাম বীর নিবাস। এখন আর তেমন কোনো সমস্যা নেই। স্বপ্নের এ ঠিকানা পাশাপাশি আমাদের ভাগ্যেও পরিবর্তন এসেছে। প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বিশ হাজার টাকা পাচ্ছি। আমার দুই মেয়েকে বিয়ে ও এক ছেলের সরকারি চাকরির বেতনের টাকা দিয়ে অনেক সুখে আছি। এখন আর লোকের কাছে সাহায্য চাইতে হয় না।
এদিকে উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মনছুর আলী ও তার স্ত্রী খমিরান বেগমের মৃত্যু হলে তার কোন ওয়ারিশ না থাকায় ঘরের কাজটি আর করা হয়নি বলে জানান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম।
সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমদাদুল হক বাবলু বলেন, সরকার যে ঘরগুলো দিচ্ছে তা অবশ্যই একটি ভালো কাজ। এতে করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই পেয়েছে এবং তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। এ জন্য মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলার সূর্য সন্তানেরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।
অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মণ্ডল জানান, উপজেলা মোট ৩৯ টি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১২ টি বাড়ি উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর ও ২৬ টি বাড়ির নির্মাণকাজ চলমান আছে ও একটি ঘরের কোনো ওয়ারিশ না থাকায় কাজটি করা সম্ভব হয়নি । আর প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।
বীর নিবাস পেয়ে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নত হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে যাওয়া বীর যোদ্ধাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উপজেলার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া ঘর পেয়ে তাদের জীবনমান বদলে গেছে।
ছবি: সংযুক্ত
এসি