সুনামগঞ্জে রেমিট্যান্স আসছে অন্য বছরের চেয়ে বেশি

সুনামগঞ্জে রেমিট্যান্স আসছে অন্য বছরের চেয়ে বেশি

বিশেষ প্রতিনিধি
‘আমারার পরিবারের বড়-ছোট মিলাইয়া ৫০ জনের মতো যুক্তরাজ্যে আছি। আমরা ৬ ভাইয়ে রোজগার করি, চাচাতো ভাইয়ানও আছইন। ইদেশে (যুক্তরাজ্যে) থাকলেও সব সময়ই আমরা দেশও কোরবানি দেই। ইবারও দেশও কোরবানি দিমু। সবে মিইল্লা কোরবানি, যাকাতসহ সায় সাহায্য দেওয়ার লাগি কমপক্ষে ৫০ লাখ টেকা দেশও পাঠাইমু। কেউ কেউ এরমধ্যে পাঠাই দিছইন, দুয়েক দিনের মধ্যে আরও পাঠাইমু।’
জগন্নাথপুরের শ্রীরামসী গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী নাদের হোসেন এভাবেই কোরবানি উপলক্ষে দেশে স্বজনদের কাছে টাকা পাঠানোর বর্ণনা দিলেন। নাদের হোসেন জানালেন, দেশে এবং প্রবাসে করোনা পরিস্থিতিতে সংকটে আছেন অনেকেই। বিশেষ করে দেশের স্বজনরা বিপদে আছেন। প্রবাসে যারা আছেন তারা টাকা না পাঠালে অনেকের পক্ষে হয়তো দেশে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হবে না। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে সকলেই দেশে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। দেশের স্বজনদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন সবাই। সাধ্যমত সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন।
দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র আজিজুর রহমান বুলবুল যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তাঁর পরিবারের ২০ জনের মতো সদস্য প্রবাসে আছেন।
দেশে থাকা তাঁর ভাই লালন মিয়া বললেন,‘ঈদে পরবে সব সময় স্বজনদের সহায়তা করেন ভাই, এবারও খোঁজ খবর নিচ্ছেন, তিনি নিজেও ৫ গরু কোরবানি দিয়ে আত্মীয়-স্বজনসহ দরিদ্র মানুষদের বিতরণ করবেন। কোরবানি, যাকাত এবং সহায়তা মিলে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা এবার দেশে পাঠাবেন তিনি।
করোনার মধ্যে যে কোন সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক আয় (রেমিট্যান্স) গত কয়েকদিনে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন ব্যাংকে এসেছে। ব্যাংকাররা বলেছেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বেশি রেমিট্যান্স আসছে এই জেলায়। কোন কোন ব্যাংকে আলাদা রেমিট্যান্স ডেস্ক করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা শ্যাডওয়েলে অবস্থিত বাংলাদেশী রেমিট্যান্স হাউজ ওয়াটনি এন্টারপ্রাইজের পরিচালক আসম মাসুম বললেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ইতিমধ্যে অন্য বছরের চেয়ে ২০-২৫ শতাংশ বেশি প্রবাসী আয় ট্রান্সফার হয়েছে। তবে গত কয়েকদিন বাংলাদেশে ব্যাংক স্বল্প সময়ের জন্য খোলা থাকায় প্রচ- ভিড় ঠেলে অনেকে টাকা তুলতে হয়েছে। এরপরও গত ৩ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৫০ লাখ টাকার ট্রানজেকশন হয়েছে। যা অন্য বছর ঈদের সময়ের চেয়ে বেশি।
সুনামগঞ্জের প্রবাসী অধ্যুষিত বড় গ্রাম সৈয়দপুরের একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপক পরিচয় উধৃত না করার অনুরোধ জানিয়ে বললেন, এই সময়ে অন্য বছর ঈদের আগে যা হয়, এবার এরচেয়ে গত ৩-৪ দিনে প্রতিদিন কোটি টাকা বেশি রেমিট্যান্স ঢুকেছে।
প্রাইম ব্যাংকের সুনামগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক বিশ^জিৎ পাল বললেন, আমাদের শাখায় রেমিট্যান্স খুব বেশি আসে না, তারপরও অন্য বছরের চেয়ে ভালো।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের সুনামগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক নিহারেন্দু ভট্টাচার্য বললেন, পৃথক রেমিট্যান্স ডেস্কের মাধ্যমে ওয়ান স্টপ এ- ইনস্টেন্ট সার্ভিস দিচ্ছি আমরা। এবার ঈদ মৌসুমের রেমিট্যান্স অন্য বছরের দ্বিগুন হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের সুনামগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক আতিকুল ইসলাম জানালেন, বৈদেশিক আয় এবার তুলনামূলক বেশি আসছে। ব্যাংকের রেমিট্যান্স বুথ থেকে সহজে এবং কম সময়ে যাতে গ্রাহকরা সার্ভিস পান সেই বিষয়টি আমরা মনিটরিংয়ে রাখছি।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আইনুল ইসলাম বাবলু বললেন, প্রবাসীরা সকল ক্রান্তিকালে দেশের এবং দেশের মানুষের পাশে উদারহস্তে দাঁড়ান। এবারও এর ব্যতিক্রম হয় নি। করোনাকালে দেশের মানুষ সংকটে আছেন, এটি বুঝতে পারছেন প্রবাসীরা। কেবল স্বজন নয়, পাড়া প্রতিবেশি গ্রামের মানুষের ঈদ আনন্দে যাতে কমতি না হয়, সচেতনভাবে সেই চেষ্টায় আছেন প্রবাসীগণ।

Explore More Districts