ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে রাজনৈতিক অঙ্গনে সরব হয়েছে ইতিমিধ্যে বিএনপি, জামায়াত, গণ অধিকার, জমিয়ত, খেলাফত মজলিস, ইসলামি আন্দোলন এর সকল প্রার্থী চুড়ান্ত ঘোষনা করা হয়েছে। কুশিয়ারা তীরবর্তী প্রবাসী অধ্যুষিত ও গ্যাসসম্পদে সমৃদ্ধ এ আসনে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি বিএনপি ও ইসলামি দলগুলোর জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
অতীতে এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও এবার আওয়ামী লীগ কার্যত নির্বাচনী মাঠ থেকে ছিটকে পড়েছে। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থাও নড়বড়ে। ফলে বিএনপির ভেতরেই প্রার্থী জট তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী নতুন মুখ নিয়ে মাঠে নামায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও জমে উঠেছে।
বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ-৬ নির্বাচনি আসনের ভোটের মাঠে বিএনপির উত্তরসূরিদের উত্তাপ এর পাশাপাশি, প্রবাসী, নতুন মুখ ও পুরাতন নেতারা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে। প্রবাস ফেরত অনেক নেতা কর্মী, গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে সভা সমাবেশ শোডাউন দিয়ে জানান দিচ্ছেন, সিলেটের অগ্রসর জনপদ গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার নিয়ে গঠিত সিলেট–৬ আসনে বিএনপি এবার মনোনয়ন দিয়েছে জেলা সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীকে। তবে এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে দলের ভেতরে তৈরি হয়েছে স্পষ্ট মতবিভেদ। কারণ, গত নির্বাচনের প্রার্থী ও লক্ষাধিক ভোট পাওয়া নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুগতরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।মনোনয়নবঞ্চনার পর ফয়সল চৌধুরী কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে কর্মী-সমর্থকদের ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
২০১৮ সালের আলোচিত ‘রাতের ভোটে’ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ফয়সল চৌধুরী এক লাখের বেশি ভোট পেয়েছিলেন—এ দাবিকে সামনে রেখে তার অনুসারীরা মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জোর দাবি তুলেছেন। বিয়ানীবাজারে বিএনপির বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনাসভায় তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, বর্তমানে রাজনৈতিক বাস্তবতায় ফয়সলকে পুনরায় প্রার্থী করলে তার বিজয় সম্ভাবনা অনেক বেশি।উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন বলেন, ‘অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি ও চরম খারাপ অবস্থা ছিল ২০১৮ সালে। দলীয় নেতাদের ওপর মামলা, হামলার পরও ফয়সল আহমদ চৌধুরী আমাদের ছেড়ে যাননি। ১ লাখ ৮ হাজার ভোট পেয়ে তিনি জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছিলেন।’ ছরওয়ার আরও বলেন, ‘এবার এ আসনে মনোনয়ন ঘোষণার পর আমরা প্রত্যেকে হতাশ। আমরা কী আশা করেছিলাম, আর কী পেলাম। যেহেতু মহাসচিব বলেছেন, এটা চূড়ান্ত নয়, সম্ভাব্য তালিকা। তাই আমরা দাবি করছি, সিলেট-৬ আসনে যেন ফয়সল চৌধুরীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়।’
সভায় ফয়সলকে ফিরিয়ে আনতে দাবি জানিয়ে বিয়ানীবাজারের নেতারা সভায় বলেন, ২০১৮ সালের দুঃসহ অবস্থায়ও ফয়সল চৌধুরী আন্দোলন-সংগ্রাম ও সংগঠনের পাশে ছিলেন। তার জনপ্রিয়তাকে উপেক্ষা করায় তারা হতাশ। তাদের দাবি—মনোনয়ন তালিকা ‘সম্ভাব্য’ হওয়ায় সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত ফয়সল চৌধুরীকেই প্রার্থী করা উচিত।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের আবেগ ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন এবং। আশা করেন কেন্দ্র এসব বিষয় বিবেচনা করবে। ওই সভায় একাধিক নেতা সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী মনোনয়নের সিদ্ধান্তটি রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করার দাবি জানান।
সামনে এমরানে আহমদ দলকে একত্র করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমরান আহমদ চৌধুরী শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। তার অনুসারীরা বলছেন, ছাত্রদল থেকে শুরু করে জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন—দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষার মূল্যায়ন হিসেবেই তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
বিয়ানীবাজার পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক আয়নুল আবেদিন বলেন, গুটি কয়েক জন পরে সবাই ঐক্যবদ্ধ ধানের শীষের পক্ষে, দলের নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাক্তি চয়েজ নেই আমরা সবাই একমত ধানের শীষ যার কাছে দলের নেতাকর্মী তার পাশে।এবং আমি আশাবাদী ওনারাও ওনাদের ভুল বুঝতে পেরে খুব শীঘ্রই ধানের শীষের পক্ষে ব্যাক্তিগত সকল চাওয়া পাওয়া কে বিসর্জন দিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করব আমরা। তবে স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন, নির্বাচনী মাঠে নামার আগে এমরানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে নিজ দলের ভেতরের মতবিরোধ সামাল দেওয়া। ফয়সলপন্থীদের আস্থা অর্জন করতে না পারলে লড়াই কঠিন হয়ে উঠবে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক,ও সাবেকউপজেলা ছাত্রদল সভাপতি ফয়েজ আহমদ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ২০১৮সালের নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপির বাহিরেও জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন ফয়সল আহমদ চৌধুরী বিভিন্ন সময়ের বন্যা,করোনাকালে কিংবা,ঈদের সময় ঈদ উপহার নিয়ে জেলজুলুম ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ফয়সল আহমদ চৌধুরী তাঁকে যদি ধানের শীষ দেওয়া হয় বিএনপি এই আসন বিজয় নিশ্চিত হবে বলে আমরা মনে করছি, সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী মনোনয়নের সিদ্ধান্তটি রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আমরা আশাবাদী।
অন্যদিকে বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর যুবদল এক যৌথ বিবৃতিতে এমরান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলমান ‘অপপ্রচার’ নিন্দা করেছে। তাদের ভাষ্য—দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ মেনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, অথচ একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
