বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মানুষকে ঠেলে পাঠানো (পুশ ইন) অব্যাহত রেখেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত শুক্রবারও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ৯ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে গত ২৬ দিনে বিএসএফ ১ হাজার ১৪৩ জনকে ঠেলে পাঠাল।
বিজিবি সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ মে থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ১৮টি জেলার সীমান্ত দিয়ে ১ হাজার ১৪৩ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। এর মধ্যে খাগড়াছড়িতে ১৩২ জন, সিলেটে ১১৫ জন, মৌলভীবাজারে ৩৮০ জন, হবিগঞ্জে ৪১ জন, সুনামগঞ্জে ১৬ জন, কুমিল্লায় ১৩ জন, ফেনীতে ৫২ জন, কুড়িগ্রামে ৯৩ জন, লালমনিরহাটে ৮৫ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৯ জন, পঞ্চগড়ে ৩২ জন, দিনাজপুরে ১৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৭ জন, কুষ্টিয়ায় ৯ জন, মেহেরপুরে ৩০ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৯ জন, ঝিনাইদহে ৫২ জন এবং সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ২৩ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়।
যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পুশ ইন করায় বিএসএফের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মৌখিক ও লিখিতভাবে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ ছাড়া পুশ ইন রোধে বিজিবি সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল তৎপরতা বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ভাগজোত সীমান্ত দিয়ে ৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল শনিবার সকালে সীমান্তের ভাগজোত এলাকায় একটি নৌকা থেকে এই ৯ জনকে নামতে দেখা যায়। পরে তাঁদের ক্যাম্পে নিয়ে যান বিজিবি সদস্যরা। এর আগে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।
গতকাল বিকেলে ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ঠেলে পাঠানো ৯ জনকে বিজিবির স্থানীয় ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল সকাল ১০টার দিকে সীমান্ত পিলার ১৫৪ থেকে আনুমানিক তিন কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভাগজোত ঘাট এলাকায় একটি নৌকা থেকে ৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নামতে দেখা যায়। স্থানীয় জনগণের সন্দেহ হলে তাঁরা বিষয়টি বিজিবিকে জানান। বিজিবির টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, প্রায় চার বছর আগে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে তাঁরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির দিল্লিতে ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, শুক্রবার ওই ৯ জনকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলঙ্গি থানার নিকটবর্তী একটি বিএসএফ ক্যাম্পে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বিএসএফ কাঁটাতারবিহীন চরাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়। বাংলাদেশে ঢোকার পর তাঁরা হেঁটে ও ভাড়া করা মোটরসাইকেলে করে ভাগজোত ঘাট এলাকায় পৌঁছান। বিএসএফের ঠেলে পাঠানো ৯ জনের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, ২ জন নারী, ২ জন কিশোর ও ১টি শিশু।
বিজিবি জানায়, এ ব্যাপারে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্ত পিলার ৮৫/১০-এসের কাছে বিজিবি চরচিলমারী কোম্পানি ও ১৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের জলঙ্গি কোম্পানি কমান্ডারের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠকে বিজিবি পুশ ইনের বিষয়ে প্রতিবাদ জানায়। তবে বিএসএফ তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। তবে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে বলে উল্লেখ করেছে বিএসএফ।