সিলেট থেকে সারাদেশে নির্বাচনী উৎসবের জোয়ার ছড়িয়ে দেয়া হবে

সিলেট থেকে সারাদেশে নির্বাচনী উৎসবের জোয়ার ছড়িয়ে দেয়া হবে

সিলেট থেকে সারাদেশে নির্বাচনী উৎসবের জোয়ার ছড়িয়ে দেয়া হবে

দশ লক্ষাধিক মানুষের টার্গেট আ. লীগের

আগামী বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সিলেট সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এই সফরের মধ্য দিয়ে সিলেট থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন তিনি। সিলেটে এসে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান রহ.-এর মাজার জিয়ারতের পর ঐতিহাসিক সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশাল জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরকে কেন্দ্র করে দারুণ উজ্জীবিত আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর আগে, ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছিলেন শেখ হাসিনা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় দশ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন সিলেটের নেতাকর্মীরা। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের নৌকার প্রার্থীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রত্যেক আসন থেকে ১০ হাজার করে মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে। জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপান্তরিত করার টার্গেট করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ।

গত এক সপ্তাহ থেকে চলছে নিয়মিত প্রচার প্রচারণা। আওয়ামীলীগ ছাড়াও অঙ্গ সংগঠনগুলো প্রচার মিছিল ও লিফলেট বিতরণ করছে নিয়মিত। বিভাগের প্রত্যেকটি জেলা ও উপজেলায় এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও শেখ হাসিনার আগমনকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছে নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। সিলেট জুড়ে নেয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। গত তিন দিন থেকেই জনসভাস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে সিলেট থেকে নির্বাচনী জোয়ার তুলতে চায় আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যেই সিলেটের জনসভাকে বিশাল জনসমুদ্রে রূপ দিতে চান নেতাকর্মীরা। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সিলেটে ভোটের মাঠ এখনো নিরুত্তাপ। বিএনপি অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগের জন্য ভোটের মাঠ অনেকটা ফাঁকা। সিলেটে জাতীয় পার্টি ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্য বাকি দলগুলোর সাংগঠনিক তেমন অবস্থানই নেই। সেকারণে পূণ্যভূমি সিলেট থেকেই সারাদেশে নির্বাচনী ঝড় তুলতে চায় আওয়ামী লীগ।

এজন্য প্রতিবারের ন্যায় এবারও সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা করে কেন্দ্রীয় নেতারা দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। বৃহৎ সমাবেশ করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সিলেটের জনসমাবেশ দেখে যাতে নির্বাচন নিয়ে সারাদেশের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ জেগে ওঠে সেটার সফল বাস্তবায়ন ঘটাতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর ঘোষণা দেয়ার পর থেকে সিলেটের নেতাকর্মীরা চাঙা হয়ে ওঠেন। জনসভার জন্য প্রতিবারের ন্যায় স্থান নির্ধারণ করা হয় সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। সমাবেশ সফলে গত ১৩ ডিসেম্বর প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ প্রায় একডজন কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতিতে সিলেটের একটি কনভেনশন হলে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিলেট বিভাগের চার জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ২০ ডিসেম্বর আলীয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসমাবেশে স্মরণকালের বৃহৎ করার নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সভায় বিভাগের ১৯টি আসনের সকল নৌকার প্রার্থীকে অন্তত ১০ হাজার করে লোক নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হয়।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট আগমনকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়ে ওঠেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। চলছে দফায় দফায় সভা ও প্রচার মিছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটবর্জনকারী বিএনপি ও জামায়াত চাইবে ভোটার উপস্থিতি কমাতে। তাদের এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে শেখ হাসিনার প্রথম নির্বাচনী জনসভা জনসমূদ্রে পরিণত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যাতে সিলেটের জনসমূদ্র দেখে দেশের সকল জেলায় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। তারা যাতে সপরিবারে উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট দিতে চায়। ওই জনসভায় সিলেট বিভাগের নৌকা এবং কোন আসন জোটের শরীক কোন দলকে ছেড়ে দেয়া হলো ওই আসনের প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাদের পক্ষে সিলেটবাসীর কাছে ভোটও চাইবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফর ও জনসভা প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ জানান, শেখ হাসিনা প্রতিবারই পূণ্যভূমি সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট আগমনের খবরে শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। সিলেটের এই জনসভার জনসমাবেশ দেখে সারাদেশে নির্বাচনী ঝড় আরও বেগবান হবে বলে আমরা আশাবাদী।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, আলীয়া মাঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাবেশ করার সকল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বিভাগের প্রতিটি জেলা উপজেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা সমাবেশে এসে যোগ দেবেন। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। নির্বাচনী ট্রেন থেকে নেমে ভুল করেছে বুঝতে পেরে বিএনপি-জামায়াত ৭ জানুয়ারি ভোটার উপস্থিতি কমানোর ষড়যন্ত্র করছে। তারা আগুন সন্ত্রাস করে মানুষের মধ্যে ভীতিসঞ্চারের চেষ্টা করছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সমাবেশে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখে তাদের মাথা আরেকবার খারাপ হবে। সিলেট থেকে সারাদেশে নির্বাচনী উৎসবের জোয়ার ছড়িয়ে দেয়া হবে।

ওশিন

Explore More Districts