দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি জোরদার করেছে। দলটির প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় এখন সবচেয়ে আলোচিত অঞ্চল সিলেট বিভাগ। এখানে ১৯টি সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা গত এক মাসে প্রায় অর্ধেকে নেমে এলেও, কয়েকটি আসনের প্রার্থী চূড়ান্তকরণ নিয়ে এখনো চলছে তুমুল গুঞ্জন।
দলের বিভিন্ন সূত্র ও দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ করে যেসব আসনে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ভারী (হেভিওয়েট) নেতা, প্রবাসী বিএনপি নেতা, ত্যাগী ও দুর্দিনের কাণ্ডারিরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন — সেসব আসনেই সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছে দলীয় হাইকমান্ড।
সবচেয়ে আলোচিত আসন সিলেট-১। এই আসনে বিএনপির দুজন প্রার্থী—দুজনই চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।
একজন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, অপরজন সাবেক এমপি খন্দকার আব্দুল মালিকের পুত্র খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির।
দুজনই প্রভাবশালী এবং দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। দলীয় সূত্র বলছে, মুক্তাদিরের লন্ডন সংযোগ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তার মনোনয়ন পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত বলে অনেকে মনে করছেন।
সিলেট-২ আসনটি বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলী-এর আসন হিসেবে পরিচিত। তার স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী লুনা এখানকার মনোনয়ন প্রত্যাশী।
তবে তার বিপরীতে রয়েছেন দলের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও নবনিযুক্ত যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির, যিনি যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষনেতা হিসেবেও পরিচিত। ফলে এ আসনে প্রবাসী বনাম স্থানীয় নেতৃত্বের ভারসাম্য রক্ষা করা বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিলেট-৩ আসনে রয়েছেন অন্তত তিন প্রভাবশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, ব্যারিস্টার এম এ সালাম এবং জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী—তিনজনই এখনো মাঠে সক্রিয়।
এছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল আহাদ খান জামাল, ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনান, ও যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিইও এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
সিলেট-৪ আসনে প্রবাসী নেতাদের প্রতিযোগিতা বেশি।
যদিও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর এ আসনে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও তিনি আপাতত রাজি নন। ফলে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীর নাম এখন আলোচনায়।
এ ছাড়া ভোটের মাঠে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাকিম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম, ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিম, এবং সাবেক নেতা শামসুজ্জামান জামানও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সক্রিয়।
শামসুজ্জামান জামান সম্প্রতি গোয়াইনঘাটে জনসভা ও সিলেট শহরে মোটরসাইকেল শোডাউন করে দৃষ্টি কেড়েছেন।
সিলেট-৫: হারিছ চৌধুরী পরিবারের প্রভাব রয়েছে। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন চবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মামুনুর রশীদ মামুন।
তবে প্রয়াত বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর পরিবারের প্রতি স্থানীয় ভোটারদের গভীর আবেগ ভোটের সমীকরণে বড় ভূমিকা রাখছে।
চৌধুরী পরিবারের সমর্থন যেখানে যাবে, সেখানেই ভোটের পাল্লা ভারি হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
যদিও হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজীন চৌধুরী মাঠে আছেন, তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন না করার সম্ভাবনা বেশি।
এ আসনে আরও আছেন হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন।
জোট হলে এ আসন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রার্থী হতে পারেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক।
সিলেট-৬: প্রবাসী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ভিড় লক্ষনীয়। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কাহের শামীম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরী, সাবেক এমপি ড. সৈয়দ মকবুল হোসেনের কন্যা সৈয়দা আদিবা হোসেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবিনা খান পপি, চিত্রনায়ক হেলাল খান প্রমুখ।
বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন,“গোটা সিলেট এখন কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে। প্রার্থী চূড়ান্ত হলে ধানের শীষের পক্ষে সবাই একসাথে মাঠে নামবে—এটা প্রায় নিশ্চিত।”
দলীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, সিলেট বিভাগে প্রবাসী নেতা ও স্থানীয় ত্যাগী নেতাদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে লন্ডনভিত্তিক নেতৃত্বের প্রভাব, অন্যদিকে মাঠের কর্মীদের প্রত্যাশা—এই দুইয়ের সমন্বয়েই নির্ধারিত হবে সিলেট বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।
তথ্যসূত্র: যুগান্তর

