সিলেটের ১৯ আসনে তৎপর জামায়াত, ভালো অবস্থানে ৬ প্রার্থী

সিলেটের ১৯ আসনে তৎপর জামায়াত, ভালো অবস্থানে ৬ প্রার্থী

সিলেটের ১৯ আসনে তৎপর জামায়াত, ভালো অবস্থানে ৬ প্রার্থী

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ১৯টি সংসদীয় আসন চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। অধিকাংশ আসনে দলের প্রার্থী যেন জয় পান, সে জন্য তৃণমূলে দলের কর্মীরা ব্যাপকভাবে কাজ করছেন। বিশেষ করে যেসব আসনে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেখানে দলটি নির্বাচনী প্রচারে বিশেষ নজর দিচ্ছে।

জামায়াতের কর্মী-সমর্থক ও স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে জামায়াতে ইসলামী সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে নির্বাচনী মাঠে নামে। তবে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সিলেট-১ আসনে দলটি প্রার্থী বদল করে। এসব প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ছয়টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী শক্ত অবস্থানে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বেশির ভাগ আসনে আমাদের প্রার্থীরা জয় পাবেন বলেই মনে করছি। আমি নিজেও একটি আসনের প্রার্থী। দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে আছি। আশা করছি, আসছে নির্বাচনে ভোটাররা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।’

সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান, সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ, সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) আসনে জেলার নায়েবে আমির আনোয়ার হোসেন খান ও সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

মৌলভীবাজারে আসন চারটি। এর মধ্যে মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী ও বড়লেখা) আসনে আমিনুল ইসলাম, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে জেলা আমির এম শাহেদ আলী, মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) আসনে সাবেক জেলা আমির আবদুল মান্নান ও মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) আসনে আবদুর রব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি আসনে জামায়াতের প্রার্থীরা হলেন সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনে জেলা আমির তোফায়েল আহমেদ খান, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই ও শাল্লা) আসনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির, সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ) আসনে সিলেটের জজকোর্টের এপিপি ইয়াছিন খান, সুনামগঞ্জ-৪ (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) আসনে সুনামগঞ্জ জেলার নায়েবে আমির মুহাম্মদ শামসউদদীন ও সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) আসনে গোবিন্দনগর ফাজিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুস সালাম আল মাদানী।

এ ছাড়া হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ ও বাহুবল) আসনে সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী, হবিগঞ্জ-২ (আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং) আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের শুরা সদস্য শেখ জিল্লুর রহমান আজমী, হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে হবিগঞ্জ জেলার সেক্রেটারি কাজী মহসিন আহমেদ ও হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর) আসনে হবিগঞ্জ জেলা আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।

স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, জামায়াতের প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট-৩ আসনে লোকমান আহমদ, সিলেট-৪ আসনে জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৬ আসনে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ-২ আসনে মুহাম্মদ শিশির মনির, মৌলভীবাজার-১ আসনে আমিনুল ইসলাম এবং হবিগঞ্জ-১ আসনে মো. শাহজাহান আলী শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তাঁদের জয় পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে এলাকায় প্রচার আছে। অন্যদিকে সিলেট-১ আসনে মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট-৫ আসনে আনোয়ার হোসেন খান এবং সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আবদুস সালাম আল মাদানী তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন বলেও স্থানীয়ভাবে আলোচনা আছে। এর বাইরে অপর প্রার্থীরা মাঠপর্যায়ে ব্যাপকভাবে কাজ করছেন।

জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের যে কয়েকটি অঞ্চলে জামায়াতের কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের আধিক্য রয়েছে, এর মধ্যে সিলেট বিভাগ অন্যতম। তাই এই অঞ্চলের ১৯টি আসনকে টার্গেট করে কর্মী-সমর্থকেরা প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন। প্রতিদিনই দলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন এবং সভা-সমাবেশও করছেন। যেসব আসনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছেন, সেখানে দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ করে জামায়াতের প্রার্থীরা মণ্ডপ পরিদর্শন গিয়ে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। মূলত বিভাগের অধিকাংশ আসনে জয় পেতে মরিয়া জামায়াত ভেতরে–ভেতরে কাজ করছে।

সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও হবিগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী মো. শাহজাহান আলী বলেন, ‘সিলেট মহানগরের রাজনীতিতে থাকলেও এলাকার মানুষের সঙ্গে সব সময়ই আমি যুক্ত ছিলাম। হবিগঞ্জ-১ আসনের ভোটারদের কাছ থেকে কখনোই বিচ্ছিন্ন ছিলাম না। এখন প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় সেটা ভালোভাবেই টের পাচ্ছি। যেখানেই যাচ্ছি, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই আমাকে গ্রহণ করছেন।’

Explore More Districts