সিএনজিতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি/ মাসিক টুকেন নিলেই ঘুরে চাকা

সিএনজিতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি/ মাসিক টুকেন নিলেই ঘুরে চাকা

স্টাফ রিপোর্টার
জেলার অভ্যন্তরে চলা তিন চাকার সিএনজি গাড়ির চালকদের নিকট থেকে অতিরিক্ত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সিএনজি মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। প্রতিদিন চাঁদা আদায়ের রসিদে ২০ টাকা উল্লেখ করা হলেও চালকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও মাসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত নয়, নিয়ম মেনেই হচ্ছে চাঁদা আদায়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সুনামগঞ্জ অফিসসূত্রে জানা যায়, জেলায় নিবন্ধিত তিন চাকার সিএনজির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার সাতশ’। এই বাইরেও পাঁচ থেকে সাত হাজার সিএনজি সড়কে চলছে। যাদের কোনো নিবন্ধন নেই। এছাড়াও মোট চালকদের প্রায় ৯০ ভাগেরই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
মঙ্গলবার সরেজমিনে কয়েকটি সিএনজি স্টেশনে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সড়কে চলা সিএনজি’র চালকদের কাছ থেকে সুনামগঞ্জ জেলা সিএনজি চালিত অটো-রিক্সা, মিশুক ও ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ৩০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এই চাঁদা উত্তোলনের রসিদে আবার ২০ টাকা উল্লেখ করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ব্যাপারে অস্বীকার করলেও চালকরা বলছেন, ২০ টাকার রসিদ দিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩০ টাকা উত্তোলন করা হয়।
এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলা সিএনজি চালিত অটো রিক্সা, বেরী টেক্সী ও টেক্সীক্যাব মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও চালকদের কাছ থেকে মাসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা তোলা হয়। নিবন্ধন আছে এমন সিএনজি থেকে ২০০ ও নিবন্ধন নেই সিএনজি থেকে ৩০০ টাকা করে উত্তোলন করা হয়।
সংগঠনের নেতারা অবশ্য বলছেন, নিবন্ধন আছে এমন সিএনজি থেকে ১৫০ ও নিবন্ধন নেই এমন সিএনজি থেকে ২৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
সিএনজি চালকরা বলছেন, প্রতিদিন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩০ ও মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে নিবন্ধনহীন সিএনজিকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। প্রতিদিন নেয়া ত্রিশ টাকা তাদের কল্যাণ ফান্ডের নামে গেলেও এই টাকায় শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য কল্যাণ হয় না।
সিএনজি চালক আরিফ রহমান (ছদ্মনাম) বলেন, আমরা মাসিক টুকেন বাবদ প্রতিমাসে তিন শ’ টাকা করে দিই। গাড়ির নিবন্ধন নেই ও আমার নিজেরও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। টাকা না দিলে সড়কে ট্রাফিক স্যারেরা সমস্যা করে। সিএনজি চালাতে দেয় না। তিনি বলেন, প্রতিমাসে কারা টাকা দিয়েছে কারা দেয় নি, তাদের তালিকা রয়েছে। তাই ঝামেলায় না পড়ার জন্য টাকা দিয়ে দেই।
সিএনজি চালক রাকিবুল ইসলাম (ছদ্মনাম) মাসিক টুকেন দেখিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই হচ্ছে মাসিক টুকেন। এটা দেখালে পুলিশে রাস্তায় গাড়ি আটকায় না। আগে অন-টেস্ট সিএনজির জন্য এই টুকেন নিতে দিতাম আড়াইশ’ টাকা। এখন তিনশ’ টাকা। আর নিবন্ধন আছে সিএনজির জন্য আগে দেয়া হতো দেড়শ’ এখন দুইশ’ টাকা। এটা সঙ্গে না থাকলে এ নিয়ে হেনস্থা করে পুলিশ। সুনামগঞ্জ সদরের অধীনে এই গাড়ি রয়েছে, এর প্রমাণ হলো তিনশ’ টাকার রসিদ।
প্রায় সাত বছর ধরে তিন চাকার সিএনজি চালান জহির রহমান (ছদ্মনাম)। তিন বছর আগে এক দুর্ঘটনায় যাত্রীর পা ভাঙে। পরে চিকিৎসা বাবদ ৫ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হয়েছে তাকে।
তিনি বলেন, সমিতির অফিসে বসেই বিচার হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা বাবদ পাঁচ হাজার টাকা যাত্রীকে দিতে হয়েছে। এই টাকাও আমাকে দিতে হয়েছে। সংগঠন আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করে নি।
এ বিষয়ে জেলা সিএনজি চালিত অটো-রিক্সা, মিশুক ও ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিন (কালা) বললেন, আমরা অতিরিক্ত টাকা কারও কাছ থেকে উত্তোলন করি না। রসিদের মাধ্যমে চালকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২০ টাকা করে নেয়া হয়। এই টাকার ১০ টাকা প্রতি স্টেশনের ম্যানেজারকে দেওয়া হয়। বাকী ১০ টাকা শ্রমিকদের কল্যাণ ট্রাস্টে জমা হয়। সেখান থেকে চালকদের বিভিন্ন সমস্যায় সহযোগিতা করা হয়। কেউ মারা গেলে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ এককালীন ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
জেলা সিএনজি চালিত অটো রিক্সা, বেবী ট্যাক্সি, টেক্সীক্যাব মালিক সমিতির সভাপতি মো. তাজিদুর রহমান বলেন, সিএনজির চালকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে থেকে এই চাঁদা তুলা হয়। নিবন্ধন আছে এমন সিএনজির কাছ থেকে ১৫০ টাকা ও নিবন্ধন নেই এমন সিএনজির কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে নেয়া হয়। এর বাইরে কোনো টাকা নেয়া হয় না। এই টাকা সংগঠনের কাজেই ব্যয় হয়। বছর শেষে থাকা অবশিষ্ট টাকা মালিকদের মাঝে বিতরণ করে দেওয়া হয়।
নিবন্ধনহীন সিএনজি থেকে একশ’ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই টাকা নেওয়া হয়। এর বাইরে কিছু বলা যাবে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সুনামগঞ্জ অফিসের মোটর যান পরিদর্শক শফীকুল ইসলাম রাসেল বলেন, জেলায় নিবন্ধিত তিন চাকার সিএনজির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার সাতশ’। এই বাইরেও প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার সিএনজি সড়কে চলছে। যাদের কোনো নিবন্ধন নেই। এগুলোর বিরুদ্ধে আমরা টানা ১৫ দিন ধরে সড়কে অভিযান পরিচালনা করছি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রঞ্জন কুমার দাস বললেন, আমরা প্রতিদিনই নিবন্ধনহীন সিএনজি আটক করছি। এরপরেও বিষয়টি খোঁজ নেবো। সতত্যা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Explore More Districts