‘সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে অভিযোগ করে’ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেছেন, আমাদের উচিত প্রধানমন্ত্রী কাছে সঠিক বার্তাটি পৌঁছানো। তাহলেই তিনি আমাদের দাবি ও প্রতিজ্ঞা বুঝতে পারবেন। সিআরবিতে কোন হাসপাতাল হতে দেব না।এটি রক্ষায় প্রয়োজনে আমরা অনশন শুরু করব।
সোমবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় সিআরবিতে ‘নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম’ আয়োজিত প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচিতে এ প্রতিজ্ঞার তিনি এসব কথা বলেন।
ড. অনুপম সেন বলেন, চট্টগ্রাম শহরের এক সময়ের যে প্রাকৃতিক সুন্দর ঐতিহ্যপূর্ণ জায়গা ছিল কোনোটিই এখন আর নেই। এমনকি চট্টগ্রামের যে পরীর পাহাড় বা ফেয়ারি হিল বা কোর্ট বিল্ডিং, এক সময় সেখানে উঠলে কর্ণফুলী নদী যে চট্টগ্রাম শহরকে বেষ্টন করে রয়েছে তা দেখা যেত। আজকে কিছুই দেখা যায় না। চট্টগ্রাম গাছ শূন্য হয়ে যাচ্ছে।’
‘দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গলকে রক্ষায় বিশ্বেও অনেক দেশ অর্থ দিয়ে যাচ্ছে কারণ বিশ্বের অক্সিজেনের চাহিদা মেটায় আমাজন। ঠিক সেরকম এই সিআরবিতে অসংখ্য শতবর্ষী গাছ রয়েছে কত চমৎকার। এই পুরো অঞ্চলটাই মহানগরীর শ্বাস কেন্দ্র। এখানে রয়েছে শহীদ আবদুর রবের বাসা। এই শহীদ আবদুর রবের সাথে ১৯৭১ সালের এপ্রিলে কানুনগোড়ায় দেখা হয়েছিল। তখন তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের জিএস। আমি বলেছিলাম রব তুমি সাবধানে চলাফেরা করো। শহরে যাচ্ছ বলছো, সাবধানে যেও। সে আমাকে বলেছিল, স্যার আপনি সাবধানে থাকবেন। দু:খের বিষয় সেই রব শহীদ হয়েছিল। সেই শহীদেও জায়গা এই সিআরবি।’
প্রধানমন্ত্রী প্রকৃতি সচেতন উল্লেখ্য করে ড. সেন আরও বলেন, তাঁকে ভুল বোঝানো হয়েছে। যদি তাকে যথাযথ বার্তাটি দিতে পারলে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতেন। এই আমলা বা রেলওয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী যারা তাঁকে ভুল বুঝিয়েছেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হব। আমরা প্রতিজ্ঞা করছি এখানে এই হাসপাতাল হতে দেব না। প্রয়োজনে অনশন থেকে শুরু করে যা কিছু করার সবকিছু আমরা করব।’
নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশ নেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাস আমিন, ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, সাংবাদিক প্রদীপ দেওয়নজি, পরিবেশবিদ ড. ইদ্রিস আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, পিপলস ভয়েস সভাপতি শরীফ চৌহান, ন্যাপ নেতা মিঠুল দাশগুপ্ত, আবৃত্তি শিল্পী অঞ্চল চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাসান আকবর, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবু, শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের।
বোধনের সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী। সন্ধ্যায় আলোক প্রজ্জ্বলনের সময় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী চট্টগ্রামের শিল্পীরা। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন শেষে প্রতিবাদী সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান হয় চট্টগ্রাম যন্ত্র শিল্পী সংস্থার আয়োজনে।
এমকে