সাহিত্য একাডেমি নিয়ে প্রাসঙ্গিক ভাবনা: এম. ফরিদুল ইসলাম

সাহিত্য একাডেমি নিয়ে প্রাসঙ্গিক ভাবনা: এম. ফরিদুল ইসলাম

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের চাঁদপুরের সাহিত্য অঙ্গনে একটি বিশৃংখল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। যা একেবারেই অনাকাঙ্খিত নয়। সঙ্গত কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি মনেকরি। যার মূলে রয়েছে নিকট অতীত সময় পর্যন্ত সাহিত্য চর্চার মানুষগুলো কোন এক অপশক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়া। যা সাহিত্য অঙ্গনের মানুষগুলোর জন্য মোটেও শোভন নয় এবং যার কোন প্রয়োজন ছিলো বলেও মনে হয় না।

আমাদের সমাজের অন্য অঙ্গনের মানুষগুলো রাজনৈতিক বা কোন ক্ষমতার অধীন পরিচালিত হলেও সাহিত্য অঙ্গনের মানুষগুলো কারো অধীন বা কোন শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। তারা সর্বদা সত্য ও সুন্দর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে কেন এই অঙ্গনকে কলুষিত করা হলো বিগত সময়গুলোতে? যদি এই কলুষিতার পেছনে সাহিত্যিকরা কলকাঠি না নেড়ে থাকেন তাহলে সাহিত্যিকগণ কেন অন্য অঙ্গনের কোন অপেশাদার ক্ষমতাধরদের ডেকে আনলেন এই অঙ্গনে? এটা কি সাহিত্যিকদের সত্য ও সুন্দরের চর্চার বিপরীত চর্চা হয়নি? অন্য অঙ্গনের ক্ষমতাধর ব্যক্তি সাহিত্য একাডেমির সদস্য হয়ে ভিন্ন মত দমনের মিশনে নামবে এটাইতো স্বাভাবিক। কারণ তাদের মানসিকতাই হলো সব জায়গা থেকে ভিন্ন মতের কেউ থাকলে তাদের দমন করা বা তাদের হটিয়ে নিজে দখল করা এবং নিজের পদলেহনকারি মানুষগুলোকে দিয়ে একটি ফরমায়েশি পরিবেশ সৃষ্টি করা।

তখন সঙ্গত কারণেই ভিন্ন মতের মানুষগুলো অযাচিত নিগ্রহের ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কিইবা করতে পারে? কিন্তু সত্য ও সুন্দর সাহিত্য চর্চার পুজারিরা?? কোন কিছু না ভেবে শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য পরিস্থিতি বুঝে তাদের সাহিত্যাঙ্গনে ডেকে আনা কিংবা সুবিধা পেয়ে তাদের অসত্য ও অসুন্দরকে গিলে পঞ্চমূখ হয়ে কাব্য রচনা করা কতটা ন্যায় সঙ্গত ছিলো? তা অবশ্যই এখন ভেবে দেখতে হবে।

আপনি একটি আদর্শের মানুষ, আপনার অনুকুলে ক্ষমতাধর কেউ আছেন তাই বলে ভিন্ন মতের কেউ থাকলে তাকে পাত্তা দেওয়া যাবে না। আপনার সাহিত্য মনন এমন কনে হবে? এটা কি কারো প্রতিভার প্রতি সুবিচারের চার্চা হতে পারে ?

সেদিন জেলা প্রশাসক মহোদয় বললেন, ‘ কাকে কাকের মাংশ খায় না’ কিন্তু সাহিত্যিক সাহিত্যিকের মাংশ খায়’। খুবই লজ্জ্বার কথা। পরিস্থিতির আলোকে সঙ্গত কারণেই তিনি এমনটা বলতে বাধ্য হয়েছেন।

তাই এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে অনেকখানি। এখন শুধু মানুষের প্রস্থান বা পরিবর্তন হলে চলবে না আমাদের মানসিকতারও চরমভাবে পরিবর্তন হতে হবে। বিশাল ক্ষমতাধর আবু জাহেলের নাম কুরআন শরিফে আছে আবার ক্ষুদ্র পিপিলিকার নামও কুরআন শরিফে রয়েছে। কুরআন শরিফে আবু জাহেলের নাম আছে বলেই তিনি সম্মানিত হয়ে যাননি বরং পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত ক্ষুদ্র পিপিলিকা তার প্রতিভার জন্য বা নেংড়া একটি মশার গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকার জন্য ঠিকই অনেক সম্মানের অধিকারি হয়ে চির অমর হয়ে রয়েছেন। তাই আমাদের কেউ অনেক বড়ো সাহিত্যিক হয়ে গেলেই যে তিনি অনেক সম্মানিত হয়ে যাবেন তা কিন্তু নয় অনেক সাহিত্যিককে সাহিত্য কর্মের বিপরীতে বাস্তবকর্মের কোন মিল না থাকায় তাঁদেরকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ হতেও আমরা দেখেছি। তাই আমাদের এখন সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি নিজের লিখুনির সাথে সুন্দর মননের মেলবন্ধন ও সুচর্চা জরুরি। তবেই কেবল আমরা সুন্দর একটি সমাজ পাবো সুন্দর একটি সাহিত্য অঙ্গন পাবো। আর এটা আমাদেরকে কেউ তৈরি করে দেবে না এটা আমাদেরকেই তৈরি করে নিতে হবে।

তবে বলবো, অন্যকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজের মতো করে একটি কমিটি করে নিলেই সুন্দরের চর্চা হবে? নাকি একটু সময় নিয়ে সকলকে সাথে নিয়ে গুছিয়ে এগুলে ভালো হবে। অন্যথায় পশ্চাতগামি পুরনো চর্চাই পুনঃচর্চিত হবে বৈকি?

আমার বিশ্বাস যারা সাহিত্য চর্চা করেন তাদেরকে সব সময় মানুষের মুখের ও মনের সুন্দর ভাষাগুলোকে সাজিয়ে সত্যের পিরামীড তৈরি করতে হয়। সমাজের কল্যাণে মানব জীবনে উচ্চারিত সবচেয়ে সুন্দর কথাগুলোকে শব্দের গাঁথুনিতে সাজিয়ে সমাজকে অনন্য পথের দিশা দিতে হয়। এর নাম সাহিত্য চর্চা। যদি সত্য ও সুন্দরের নামই সাহিত্য চর্চা হয়ে থাকে তবে এর বিপরীত কোন চর্চা হতে পারে না। তাই সাহিত্য সমাজের মানুষের মধ্যে মত ও পথের ভিন্নতা থাকলেও সাহিত্য বিনির্মাণে সত্য এবং সুন্দরের অনুসারি হলে তবে আর কখনো সাহিত্যিকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য অঙ্গনের দুষিত মানুষদের ডেকে আনতে হবে না। এই পথ চিরতরে রুদ্ধ করতে হবে। সাহিত্য একাডোম সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। সরকারও এই প্রতিষ্ঠানকে প্রশাসনের সাহিত্য মননের মানুষকে দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করেন। অথচ আমাদের মানষিকতা কি? আমরা হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নিজ অঙ্গনের মানুষগুলোকে অন্যকে দিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করতে এতটুকু কুষ্ঠাবোধ করি না। যা কোন দিন আমাদের কাম্য নয়। এমন মানসিকতার চর্চা বন্ধ হতে হবে। এখন সময় এসেছে সাহিত্যিক সমাজকে আরো সতর্ক হওয়ার। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে এই অঙ্গনে টেনে আনার রাস্তা মসৃণ করে তোলার দায়িত্বটাতো আমাদেরই। তাই সবাই আরো সতর্ক হয়ে পথ চলুন এবং সমাজকে আরো সুন্দর কিছু উপহার দিন। কেউ কাউকে যেন অযাচিত ট্যাগ লাগাতে না পারেন সেই জন্য নিজেই সতর্ক হোন। অতীতে ট্যাগের চর্চা করেছেন বলেই আজ একই বানে আবদ্ধ হচ্ছেন আপনিও। বিগত সময়ে যারা বাইরে ছিলো তাদেরকে কি ট্যাগ দেওয়া হয়েছে এবং আপনারা কি ট্যাগে আবিস্কার করেছিলেন একবার ভাবুনতো? নিজেকে একটি দলের স্বজ্জন ব্যক্তি জাহির করার জন্য কত সাহিত্যিককে কত কোশেস করতে দেখেছি। স্যোস্যাল মিডিয়ায় তার ভুরিভুরি তথ্য ঘুরপাক খাচ্ছে এখনো। সেই কথা এখানে আর চিবুতে চাই না। তাই আবারো বলবো নিজে ট্যাগের চর্চা ছাড়ুন এবং সাহিত্যে ত্যাগের চর্চা শুরু করুন। আগামী দিনগুলোতে সাহিত্য একাডেমীতে বসে ট্যাগের চর্চা না করে সত্য ও সুন্দরের চর্চা করুন।

লেখকদেরকে লেখকের নজরে দেখুন। কার কি আদর্শ বা ধর্মীয় পরিচয় সেই নজরে দেখলে শুধু সাহিত্য একাডেমিই নয় পুরো পৃথিবীটাই বেশি দিন টিকে থাকবে না। অতএব সবখানে পরিবর্তন শুরু হয়েছে আমরাও কেন পিছিয়ে থাকবো। সত্য ও সুন্দরের পুজারিদের সাথে নিয়ে চলার চর্চা শুরু করুন। দেখবেন সামগ্রিক পরিবর্তনটাই সত্য-সুন্দর এবং অনন্য মনে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে ‘আমার উপর অমুক ট্যাগ লাগানো হচ্ছে’ বলে আর কাউকে নিশ্চিত চিৎকার করতে হবে না।

অতএব শুধু সাহিত্য চর্চায় নয় আমাদের সামগ্রিক কর্মকান্ড সত্য ও সুন্দর সাহিত্য চর্চা কেন্দ্রিক আবর্তিত হোক এবং পরস্পরের প্রতি আরো শ্রদ্ধাবোধ ও মেনে নেওয়ার স্পৃহা জাগ্রত হোক এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।

Explore More Districts