সাভার ও ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ 

সাভার ও ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ 

‘এই তো দ্যাহেন সব তো নদীতে যায়, কোম্মে থাকমু থাহইন্না তো আর জাগা নাই। নদীতে ভাঙলে আর কি হরতে পারে..? এই পর্যন্ত ৪/৫ বার ঘর পালডাইছি, এই দ্যাহেন এইহানে হোশ্যা আছেলে, সব নদীতে গেছে। এভাবেই কথা বলছিলেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা ময়না বেগম। কচাবুনিয়া নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে হারিয়েছে বসতবাড়ি, কৃষি জমিসহ মূল্যবান গাছপালা। আর এখন যে কোন সময় বিলীন হতে পারে ময়না বেগমের বর্তমান ঘরটিও।

এই এলাকার নদী পাড়ের অধিকাংশ মানুষের জীবনচিত্র এমনই। কথা বলছিলাম একই এলাকার কৃষক খলিলুর রহমানের সাথে তিনি বলেন, ‘জন্মের পর আমি এই নদী ২০/২৫ হাত এর মতো দেখছি এপার গোনে ঢিল মারলে ওপার নেতে পারছি। কিন্তু এই নদী এহন আস্তে আস্তে অনেক বড় হইতে হইতে। এখন হাঁটা চলার পথই নষ্ট হইয়া গেছে। অনেকের বাড়ি ঘরও বিলীন হইয়া যাইতে আছে।’

পটুয়াখালী সদর উপজেলার কচাবুনিয়া নদীর ভাঙনে দিন দিন নিঃস্ব হচ্ছেন বদরপুর ও মৌকরন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। গত কয়েক দশক যাবত এই ভাঙন চললেও প্রতিকারে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় হুমকি মুখে রয়েছে ইউনিয়নের প্রধান সড়ক সহ জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের খুঁটিও।


সম্প্রতি সময়ে ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভাঙনের কারণে পটুয়াখালী-বরিশাল ১৩২ কেভি জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ১৫৭ নং বিদ্যুৎতের খুঁটিটি রয়েছে হুমকি মুখে। বেহাল অবস্থায় রয়েছে মৌকরন ইউনিয়নের চলাচলের প্রধান সড়কটি। সড়কের অর্ধেক নদী গর্ভে ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে। মৌ করন ইউনিয়নের নদীর পাড়ের সড়ক ব্যবহার করেন মৌকরন বিএলপি ডিগ্রি কলেজ, মৌকরন কারিগরি কলেজ, মৌকরন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মৌকরন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও ইউনিয়নের প্রধান বাজারসহ বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও একাধিক ইউনিয়নে চলাচল করা যায়। ফলে সড়কটি ভেঙে গেলে এই ইউনিয়নের মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদী বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হবে।

পাশপাশি নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় কচাবুনিয়া নদীর ওপর নির্মিত মৌকরন ব্রিজটিও হুমকির মুখে পরেছে।

জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন হুমকির বিষয়ে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান পলাশ বলেন, ‘ঝুঁকি বিবেচনা করে ওই খুঁটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নদী পাড়ে বালির বস্তা এবং পাইল করার জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। নদীর পানি কিছুটা কমলে কাজটি শুরু করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, নদী ভাঙন ও জনগুরুত্বের কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে ভাঙন এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। জরিপ শেষে পরিকল্পনা ও ডিজাইন তৈরি করে অনুমোদনের জন্য জন্য প্রেরণ করা হবে। অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করা হবে।

গত কয়েক বছর আগে এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এই এলাকায় জরুরী রক্ষনাবেক্ষন এর নামে কিছু কাজ করলেও তা খুব বেশি কাজে আসেনি। ভাঙন প্রতিরোধে তাইতো টেকসই ও পরিকল্পিত উন্নয়নের দাবি স্থানীয়দের।

Explore More Districts