Post Views:
৫৩
রঘুনাথ খাঁঃ সাতক্ষীরা শহর থেকে বাঁশদহ সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার সময় আগরদাাঁড়ি ইউনিয়নের শ্রীপুর এলাকা থেকে গত বুধবার দুপুরে সোনা বহনকারি ইজিবাইকের চালকসহ ইজিবাইকের পিছনের সিটের স্টীলের হাতল খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। মুক্তি পাওয়া ইজিবাইক চালক ও তার দুলাভাইকে পরদিন বিকেলে শহরের পাকাপোল থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে সোনার মালিকপক্ষ। এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন শ্যালক , দুলা ভাই ও তাদের পরিবারের স্বজনরা।
আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের শ্রীপুর বর্ণমালা কিÐার গার্ডেনের শিক্ষক আশুতোষ ওরফে বিপ্লব ট্যাটার্জী জানান, গত ২৯ জানুয়ারি বুধবার শ্রীপুর গ্রামের আহাদের বাড়ির পাশে সাতক্ষীরা থেকে যাত্রীবাহি একটি ইজিবাইক চালককে থামতে বলে একই দিক থেকে আসা গাঢ় সিলভার কালারের একটি প্রাইভেটকারে থাকা যাত্রীরা। তাদের নির্দেশে চালক ইজিবাইক ঘুৃরিয়ে আহাদের বাড়ির গেটের সামনে রাখে। তখন প্রাইভেটকার থেকে কোর্ট পরিহিত মুখোশ পরা চারজন ইজিবাইক থেকে তলুইগাছায় বাড়ি দুই নারী যাত্রীকে নামিয়ে দেন। এর আগেই কাশেমপুরের এক পুরুষ যাত্রী গাড়ি থেকে নেমে চলে যায়। প্রাইভেট কারে থাকা চারজন কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাঁছি গ্রামের আনছার আলী গাজীর ছেলে ইজিবাইক চালক আলমগীর হোসেনকে প্রাইভেট কারে তুলে নেয়। একই সাথে ইজিবাইকের পিছনের সিটের ডান পাশের স্টীলের হাতল খুলে প্রাইভেট কারে তোলেন তারা। প্রাইভেটকারটি কদমতলার দিকে চলে যায়। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামকে অবহিত করেন। আবুল কালাম থানায় খবর দিলে শিবপুর ইউনিয়নের বিট অফিসার সদর থানার উপপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন আহাদের বাড়ির সামনে থেকে ওই ইজিবাইকটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি (গেটের মুখ) গ্রামের আনছার আলী গাজী এ প্রতিবেদককে বলেন, ২৯ জানুয়ারি বিকেল চারটা ৩৭ মিনিটে একটি মোবাইল ফোনে যশোরের রাজারহাটের পাশে কলাগাছিতে তার ছেলে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে মর্মে সেখানকার এক ব্যক্তি তাকে অবহিত করেন। তিনি তার ছেলেকে একটি বাসে তুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে ওইদিন রাত ১০টার দিকে আলমগীর বাঁশদহা গ্রামে তার কেবান নার্গিসের(খালেক) বাড়িতে ফেরে। পরদিন সকাল ১০টার দিকে তিনিসহ সদরের বাঁশদহা গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুল খালেক (জামাতা) সদর থানায় যেয়ে উপপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা করে ইজিবাইক ফেরৎ চান। এ সময় আলমগীরকে তুলে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে সোনা পাচারের কাহিনী তুলে ধরেন তারা। সেখানে সোনার মালিকপক্ষের একজন কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলো। উপপরিদর্শক দেলোয়ারকে সাত হাজার টাকা দিয়ে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে থানা থেকে ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে শহরের পাকাপুলের পশ্চিম পাশে আসা মাত্রই একটি কালো রং এর সুজুকি মটর সাইকেলে আসা দুইজন তাদেরকে গাড়ি ঘুরিয়ে সরকারি কলেজের মাঠে নিয়ে যায়। ওই দুই ব্যক্তি আলমগীরের গালে থাপ্পড় মারে। খোয়া যাওয়া সোনা বাবদ দুই কোটি টাকা তাদেরকে দিতে হবে বলে তাকে নামিয়ে দিয়ে ছেলে ও জামাতাকে শাল্ল্যের দিকে নিয়ে যায়। ৩১ জানুয়ারি দুপুরে খালেক ও আলমগীরকে ছেড়ে দেয় তারা। তবে আলমগীরকে ব্যাপক নির্যাতনের অংশ হিসেবে পিটিয়ে তার বাম পায়ের গোড়ালি জখম করা হয়েছে।
এদিকে পহেলা ফেব্রæয়ারি আব্দুল খালেকের বাড়িতে গেলে তার পরিবারের সদস্যরা কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে বাঁশদহা বাজারে একটি চায়ের দোকানে থাকা আনছার আলী গাজী, তার ছেলে আলমগীর হোসেন ও জামাতা আব্দুল খালেক বলেন, এনিয়ে আর ঝামেলা করার দরকার নেই। এ সময় আলমগীরের বাম পায়ের গোড়ালীতে ব্যাÐেজ লাগানো ছিল।
অপরদিকে সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, কেড়াগাছির ইজিবাইক চালক আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে কেড়াগাঁছি এলকাার আব্দুল গফুরের ছেলে জুয়েলের সোনা পাচারের বাহক ছিল। আলমগীরের দুলা ভাই আব্দুল খালেক ছিল তার সোনা পাচারের রুট পরিদর্শক। পরবর্তীতে আলমগীর একই গ্রামের তোতার ছেলে শরীফর সোনা পাচারের বাহক হিসেবে কাজ করতো। ২৯ জানুয়ারি আলমগীরের কাছ থেকে খোয়া যাওয়া ১৮টি সোনার বার ঢাকার উত্তরার ১৩ নং সেক্টরের মুজিবর চৌধুরীর কাছ থেকে নিয়ে আসে শরিফ। পরে আলমগীরের ইজিকাইকের পিছনের সিটের হাতল খুলে সোনা লুকানো একটি হাতল লাগিয়ে দেওয়া হয়। সোনার মালিক সাতক্ষীরার দুই ব্যক্তি আলমগীর কেশৈলে আত্মসাৎ করেছে। সেকারণে আলমগীরকে পাকা পুল থেকে তুলে নিয়ে যায় তারা।
শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, গত ২৯ জানুয়ারি দুপুর ১২টার পরপরই তারই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও শ্রীপুর বর্ণমালা কিÐার গার্ডেনের শিক্ষক আশুতোষ তাকে ইজিবাইক ফেলে তার চালককে একদল দুর্বৃত্ত প্রাইভেটকারে করে নিয়ে গেছে বলে জানায়। বিষয়টি তিনি শিবপুরের বিট অফিসার উপপরিদর্শক দেলায়ারকে অবহিত করলে তিনি থানায় নিয়ে যান।
এ ব্যাপরে জানতে চাইলে সদর থানার উপপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে খবর পেয়ে তিনি শ্রীপুর থেকে ২৯ জানুয়ারি একটি ইজবাইক উদ্ধার করে পরদিন তার মালিককে ফেরৎ দেন। তবে তিনি ইজিবাইকের মালিকের কাছ থেকে সাত হাজার টাকা নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামিনুল হক এর সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) শফিকুল ইসলাম সোমবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেককে জানান, বিষয়টি তার জানা নেই।