রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম পাঁচটি গ্রামে জুমক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এতে করে সাজেক ইউনিয়নের জুমনির্ভর প্রায় ২৩২ পরিবারের ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। ক্রমাগত জুমের ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির পরিমাণ বাড়লে খাদ্য সংকটেরও আশঙ্কা দেখা দিতে পারে–এমনটাই বলছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে খোঁজ নেওয়া হবে।
জানা গেছে, সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম শিয়ালদাই মৌজায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। স্থানীয় জনগোষ্ঠী একমাত্র জুম চাষের ওপর নির্ভশীল। গত আগস্টের শেষের দিকে জুমের ধান পাকা শুরু হয়। এরমধ্যে রাতে ঝাঁকে–ঝাঁকে ইঁদুর জুম ক্ষেতে গিয়ে ধান খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। এতে প্রায় ২৩২ পরিবারের জুমের ধান নষ্ট হওয়ায় তারা ঘরে তুলতে পারছেন না ফসল। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে শিয়ালদাইলুই পাড়ায় ৫৮ পরিবার, হাচ্চ্যাপাড়ায় ৭০ পরিবার, জামপাড়ায় ১৬ পরিবার, অরুণ পাড়ায় ৪০ পরিবার ও লুংথিয়ানপাড়ায় ৪৮ পরিবার। এছাড়া সাজেক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জুম ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু পাহাড়ের ঢালে আগাছা কেটে আগুনে পুড়িয়ে চাষ করা হয় জুম ফসলের। জুম চাষ পাহাড়িদের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা হলেও এখন জুম চাষ জীবিকার অন্যতম উৎসও। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় জুম ধানের আবাদ হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টন (চাল)। তবে কেবল বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১ হাজার ৫৪৭ হেক্টর পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ধর হয়েছে ১ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন।
সাজেক ইউনিয়নের শিয়ালদাই মৌজার হেডম্যান (মৌজাপ্রধান) জৈইপুই থাং ত্রিপুরা জানান, তার মৌজা বাদেও তুইচুই, ব্যাটলিংকসহ কয়েকটি স্থানে আগস্টের শেষদিকে জুমের ধান পাকা শুরু হলেও ঝাঁকে–ঝাঁকে ইঁদুর জুম ক্ষেতে গিয়ে ধান নষ্ট করে ফেলেছে। এছাড়া কোনো কোনো এলাকায় ধানে ফুল এসেছে, আবার কোনো জুম ক্ষেতে ধানের শীষ এসেছে; সেগুলো ইদুরেরা ধান গাছের গোড়া কেটে নষ্ট করে দিয়েছে।
সাজেক ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বনবিহারী চাকমা জানান, সাজেক ইউনিয়নের ওয়ার্ডের শিয়ালদাইসহ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকায় ইঁদুর জুমের ধান নষ্ট করে দিচ্ছে। এ ইউনিয়নে সব মিলিয়ে কয়েক হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা জানান, সাজেকে প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে। এবারও সাজেকে ইঁদুর বন্যার কারণে শিয়ালদাই পাড়া, হাইচ্চ্যাপাড়া, জামপাড়াসহ ৫টি গ্রামের জুম চাষিদের সমস্ত ধান নষ্ট হয়েছে। তারা কোন ধানই ঘরে তুলতে পারছেন না। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি কার্যালয়ের উপ–পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেছেন তিনি বিষয়টি নিয়ে অবগত নন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ–খবর নেয়া হবে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমেনা মারজান বলেন, আমি সাজেকের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে বলেছি। এছাড়া ইঁদুর থেকে জুম চাষিদের ফসলগুলো কিভাবে রক্ষা করা যায় বা প্রতিকারে বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করেছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে রাঙামাটির সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম কয়েকটি গ্রামে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। সে সময় সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাদ্যশস্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। এরপর ২০২২ সালেও কয়েকটি ইঁদুরের উপদ্রবে জুমের ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েন প্রান্তিক জুমচাষিরা।