ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি – বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গতকাল আপনারা পত্রিকায় দেখেছেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেছেন, ফ্যাসিস্টদের লোকেরা যদি কেউ মাফ চেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাহলে অংশ নিতে পারবে। এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা এখন নিজেদের স্বার্থে ওই ফ্যাসিস্টদের জায়গা দিতে চায়। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা গতকাল যে কথাটা বলেছেন, ইট ইজ ডেঞ্জারাস। তার মানে কী আমরা এটা মনে করবো যে, তারা সরকারে থেকে তাদের দল গোছানোর জন্য বিভিন্ন রকম কৌশল নিচ্ছেন। সেই কৌশল নিলে আমরা তা হতে দেবো না, এদেশের মানুষ তা হতে দেবে না।’
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন ধারার রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ছাত্রদল ঢাকা মহানগরের সদস্য সংগ্রহ, ফরম বিতরণ ও সদস্য নবায়ণ কার্যক্রমে নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফরম বিতরণ উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।
এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থেকে ‘কতিপয় উপদেষ্টা’ নতুন দল গঠনের কৌশল নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি, তারা চেষ্টা করছেন অতিদ্রুত কিছু কাজ শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার। কিন্তু এর মধ্যেই কতগুলো সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে। সেই সন্দেহটা হচ্ছে আদৌও নির্বাচনের ব্যাপারে তারা আন্তরিক কিনা।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করেই বলছি, অবশ্যই নতুন যখন রাজনৈতিক দল গঠন হবে তাকে আমরা স্বাগত জানাবো। ছাত্র সংগঠন ইতোমধ্যে করেছেন, আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। যখন দল তৈরি করবেন আমরা স্বাগত জানাবো।’
‘তার মানে এই নয় যে, আপনারা সরকারে বসে, সরকারের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দল গঠন করবেন। সেটা কখনই মেনে নেওয়া হবে না, জনগণ মেনে নেবে না’, যোগ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং সরকার প্রধানকে বলতে চাই, আপনি অবিলম্বে এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিন। তা না হলে জনগণের যে আস্থা আপনাদের ওপরে আছে সেই আস্থাও থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন প্রথম বলেছিলাম যদি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা হারায় তাহলে আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। কেন বলেছিলাম তা এখন প্রমাণ হচ্ছে। তখন একজন (উপদেষ্টা) বলেছিলেন আমি একটি এক এগারোর দিকে নজর দিচ্ছি। আমরা এক এগারোর ভুক্তভোগী, এক এগারো যারা সৃষ্টি করেছিল তারা টিকতে পারেনি জনগণের কাছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আবারও হুঁশিয়ার করে বলতে দিতে চাই, যদি আবার কেউ সেই এক এগারোর কথা চিন্তা করেন, গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে আবার এক দলীয় শাসন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দিকে যেতে চান তাহলে কখনোই জনগণ তা মেনে নেবে না।’
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ‘জ্ঞান চর্চা’র ওপর গুরত্বারোপ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের শুধুমাত্র আন্দোলন-সংগঠন এসব করলেই চলবে না, আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য অবশ্যই জ্ঞানচর্চাটা করতে হবে। জ্ঞানচর্চাই হবে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে মূল কেন্দ্র। তা না হলে আমরা এগোতে পারবো না।’
তিনি বলেন, ‘যারা মেধাবী তাদের সামনে আনতে হবে। প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে, ধারণা থাকতে হবে। আমি নিজেই ছাত্র রাজনীতির প্রোডাক্ট। আমি ৬০ এর দশকে ছাত্র রাজনীতি করেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সময় আমাদের সংগঠন পড়াশোনার জন্য স্টাডি সেল তৈরি করতো। সেখানে পড়াশুনা হতো, পরীক্ষা হতো, তারপর পদোন্নতি হতো। পদ পাওয়া নির্ভর করতো যে আমি কতটুকু জানি তার ওপর। এই বিষয়টা যদি আমরা ছাত্রদলের মধ্যে চালু করতে পারি নিসন্দেহে ছাত্রদল হবে শক্তিশালী সংগঠন। আমি অনুরোধ রাখবো এরকম চিন্তা-ভাবনা নিয়ে আসতে হবে।’
আলোচনা সভায় এবা ‘স্লোগান’ না থাকায় নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজ খুব আমার লাগছে যে, কোনও স্লোগান হয়নি, হচ্ছে না। আমার খুব আনন্দ লাগছে যে এতদিন যে কথা বলেছি, অন্তত আজ একটা বাস্তবায়ন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল ছাত্রদল। উত্তর-দক্ষিণ স্লোগান দাও, মাঝে-মধ্যে ওমুক ভাই এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে- এটাও দরকার নাই। আমাদের ভাই একজনই- তারেক রহমান, আমাদের নেত্রী একজনই- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আমাদের দার্শনিক, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা একজনই- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মাঝখানে কোনও ভাই-টাই নাই। সবাই ডিসিপ্লিন মানতে হবে, ছাত্র্রদলের নেতা রাকিব, নাছিরের নেতৃত্বে মানতে হবে। অর্থাৎ একটা সুসংগঠিত ছাত্রদল গড়ে তুলতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।’
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন, উত্তরের মোস্তফা জামান, ছাত্রদলের পূর্বের সভাপতি সোহাগ ভুঁইয়া, উত্তরের সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণের সভাপতি শামীম মাহমুদ ও পশ্চিমের সভাপতি রবির খান বক্তব্য রাখেন।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
আইএ/ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫