সম্মেলনের ৬ মাস পার/ পূর্ণাঙ্গ কমিটির অপেক্ষায় তিন ইউনিট

সম্মেলনের ৬ মাস পার/ পূর্ণাঙ্গ কমিটির অপেক্ষায় তিন ইউনিট

বিশেষ প্রতিনিধি
‘এক বছর পরেই জাতীয় নির্বাচন। আমাদের দুই উপজেলায়ই আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। দুই সদস্যের কমিটি দিয়ে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করবো আমরা।’ এমন আক্ষেপ করে জেলার জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সক্রিয় একজন কর্মী বৃহস্পতিবার সকালে এ প্রতিবেদককে বলছিলেন, আপনারা পত্র পত্রিকায় লিখে আমাদের কমিটিগুলো করতে সহযোগিতা করেন ভাই।
শুধু এই কর্মী নয়। দিরাই, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জের অসংখ্য আওয়ামী লীগ কর্মীর দাবি রয়েছে সংগঠনের উপজেলা ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার।
দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে গেল ১৪ নভেম্বর। কামাল উদ্দিন কে সভাপতি ও প্রদীপ রায় কে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষিত দুই সদস্যের কমিটিতেই ছয় মাস পার। এখনো ওই উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন সম্ভব হয় নি।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রঞ্জন রায় বললেন, দিরাই উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হলেও সভাপতিকে কেউ গ্রহণ করতে পারছে না। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় দলে বিভাজন বাড়ছে, ক্রমশ দল দুর্বল হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বললেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলে, দলে দায়িত্ব নেবার মত কর্মী বাড়বে। আমরা শীঘ্রই জেলা কমিটির কাছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেব।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় গেল ১৫ নভেম্বর। সিতাংশু শেখর ধর কে সভাপতি এবং হাসনাত হোসাইন কে সাধারণ সম্পাদক করে এই উপজেলার কমিটি ঘোষণা হয়।
এই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক বললেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন, কমিটি না হলে দল পরিচালনায় সমস্যায় পড়বেন দায়িত্বশীলরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত হোসাইন বললেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা এখন জরুরি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলে দলের দায়িত্বশীর কর্মী বাড়বে।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় গেল ১৬ নভেম্বর। ওখানে সভাপতি ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল প্রয়াত উপজেলা পরিষদ আকমল হোসেনকে। তিনি এক মাস আটদিনের মাথায় মৃত্যুবরণ করেন। ওখানকার কমিটিতে রেজাউল করিম রিজুকে সম্পাদক এবং সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মিজানুর রশিদ ভুইয়া ও ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসানকে যুগ্ম সম্পাদক ঘোষণা দেওয়া হয়। দলের একপক্ষ মিজান ও আবুল হাসানকে মানতে নারাজ। এই অবস্থায় ওখানেও দলের কর্মী সংকট আছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীরেন্দ্র সুত্র ধর বললেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন দলের দায়িত্ব নেবার মত হাতে গোনা মানুষও নেই। কমিটির চারজনের মধ্যে সভাপতি মারা গেছেন। অন্য আরও দুইজনকে নিয়ে মতভিন্নতা আছে। এই অবস্থায় আগামী নির্বাচন কীভাবে মোকাবেলা করবো আমরা এই প্রশ্ন সকল কর্মীদের মধ্যেই আছে।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বিগত জেলা কমিটির দায়িত্বশীলরা প্রায় আট বছর দায়িত্ব পালনকালে এই তিন উপজেলা ছাড়া বিশ^ম্ভরপুর ও মধ্যনগর সম্মেলন করে কমিটি করেছিলেন। ছাতক ও দোয়ারাবাজারে হয়েছিল সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। অন্য সাত উপজেলার কমিটির মেয়াদকাল ২০ থেকে ২৫ বছরও হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের জাতীয় পরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বললেন, আমাদের দায়িত্বকালীন সময়ে দুই বছর করোনা, একবছর বন্যা এবং মুজিব শতবর্ষ পালনের ব্যস্ততায় কিছুদিন সম্মেলন করা যায় নি। এরপরও আমরা পাঁচ উপজেলায় সম্মেলন করেছি। দুই উপজেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করেছিলাম।
জগন্নাথপুরের নতুন কমিটির সহসভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক নিয়ে দ্বিমত করা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, সম্মেলনের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান মহোদয়, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, তখনকার সহসভাপতি মুহিবুর রহমান মানিকের উপস্থিতিতে এই চারজনের কমিটি অনুমোদন হয়েছিল। এটা নিয়ে কোন বিতর্ক থাকার কথা নয়।
গেল ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা হয়েছে। দায়িত্বশীল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রস্থাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রের দায়িত্বশীলদের কাছে জমা দিয়েছেন। কমিটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে জানালেন বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনেই।
সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট বললেন, আমরা আশা করছি দ্রুতই জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হবে। কমিটি হবার পর পরই জগন্নাথপুর, দিরাই ও শান্তিগঞ্জের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হবে। একই সঙ্গে অন্য উপজেলার সম্মেলনও করা হবে। জগন্নাথপুরের নতুন কমিটির সহসভাপতি ও যুগ্মসম্পাদক নিয়ে বিতর্কের কথা জানালেন তিনিও। বললেন, এই বিষয়টিও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে সুরাহা করা হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিন জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবার পরই ইউনিটগুলোতে সাংগঠনিক স্থবিরতা দূর করতে কাজ হবে বলে মন্তব্য করলেন।

Explore More Districts