কাদা, পানি, শ্বাসমূল, ভাঙা শামুক-ঝিনুক আর নানা জাতের কাঁটাগাছ এড়িয়ে চলাই তখন মূল কাজ। কারণ পা কেটে গেলে সামনে এগোনোর উপায় থাকবে না। প্লাস্টিকের এক জোড়া বিশেষ জুতা দিলেন এক বনরক্ষী। সেটা পরে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া গেল। কিছু দূর আগাতেই এক বনকর্মী বলে ওঠেন, ‘সকলে থামুন, এখানে বাঘের পায়ের ছাপ!’
থমকে দাঁড়াই সবাই। সামনে এগিয়ে মাটিতে ঝুঁকে পড়ে দেখার চেষ্টা করেন দলনেতা সাবিত মাহমুদ। আমিও এগিয়ে গেলাম। কাদার ওপরে স্পষ্ট হয়ে আছে বাঘের থাবা, নখের গর্ত। শিরদাঁড়া শিরশির করে উঠল। ফরেস্টার সাবিত এবার হাতের আঙুল দিয়ে বাঘের থাবার গর্ত থেকে কিছু একটা তুললেন। চোখের সামনে ধরে বললেন, ‘এ তো হরিণের চামড়া আর লোম। এখানে বসে বাঘ শিকার করা হরিণ খেয়েছে।’
খানিক দূরে আরও কয়েকটা পায়ের ছাপ দেখিয়ে বনরক্ষী সোহরাব হোসেন বললেন, ‘এ দিকটায় আর যাওয়া ঠিক হবে না।’
পা চালিয়ে অন্যদিকে যেতে যেতে বাঘের সামনে পড়ার গল্প শোনালেন সোহরাব, ‘একবার কমলার ভারানী খালের পাশের জঙ্গলে টহল দেওয়ার সময় বাঘের সামনে পড়ে গেলাম। বড়জোর ৯ ফুটে বাঘ। আমাদের একজন বলল, কেউ দৌড় দেবেন না। এমন অসহায় অবস্থায় কখনো পড়িনি। মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে উঠল। তারপরও বাঘের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইলাম। যতটা সম্ভব গলাটা স্বাভাবিক রেখে অন্য বনরক্ষীদের সঙ্গে কথা বললাম। প্রায় দেড় মিনিট পর বাঘটা চলে গেল।’