মহসিন মোল্যা, বিশেষ প্রতিবেদক-
শ্রীপুরে ফলন ও দাম কম হওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিরা। হঠাৎ এলাকার বাজার গুলোতে দাম কমে যাওয়ায় অনেকটা হতাশা তাঁরা। এ বছর উপজেলায় পাটের আশানুরূপ ফলন পায়নি চাষিরা। চলতি মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো থাকায় পাট চাষিরা অনেকটাই খুশি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই এলাকার বাজার গুলোতে পাটের দাম কমে যাওয়ার চাষিরা হতাশা ব্যক্ত করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ বছর শ্রীপুর উপজেলায় ৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬’শ ৮৯ হেক্টর জমি কম চাষ হয়েছে। উপজেলায় এ বছর পাটের মোট উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৯ বেল। পাট চাষ লাভজনক না হওয়ায় তিল ও গ্রীষ্মকালীন ভূট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। যার ফলে আগামী মৌসুমে উপজেলায় আরো পাট চাষ কমবে।
অনলাইন গ্রুপের ডিরেক্টর ও উপজেলার ছোট উদাস গ্রামের পাট চাষি খান মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছর জেলার শ্রেষ্ঠ পেঁয়াজ চাষি হয়েছি। প্রতিবছর আমি পাট চাষ করি, এ বছরও করেছি। আমি ২’শ ৮০ শতক জমিতে পাট চাষ করেছি। বর্তমান পাটের বাজার ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাট চাষে যে খরচ, সকল খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের লাভ হবে না।
উপজেলার মদনপুর গ্রামের পাট চাষি বাহারুল ইসলাম বলেন, এ বছর আমি ২’শ শতক জমিতে পাট চাষ করেছি। মোট খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। পাটের যে বাজার বিক্রি করলে লাভ তো হবেই না বরং লস হবে। পরের বছর আর পাট চাষ করবো না। ওই জমিতে অন্য ফসল থাকলে অন্তত কিছুটা হলেও লাভবান হতাম।
উপজেলার কচুবাড়িয়া গ্রামের রওশন আলী বলেন, গত বছরের শেষের দিকে পাটের দাম অনেক বেশি থাকায় এ বছর বেশি করে পাট চাষ করেছিলাম, কিন্তু হঠাৎ করেই বাজারে পাটের দাম কমে যাওয়ার হতাশায় আছি, যদি পাটের বাজার এমনই থাকে তাহলে লাভ তো পরে কথা খরচের টাকাও উঠবে না।
উপজেলার খামারপাড়া বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি গুরুদাস বলেন, গত ২ সপ্তাহ আগে আমরা কৃষকের কাছ থেকে প্রতিমন ৩ হাজার টাকা দের পাট ক্রয় করেছিলাম। সেই পাট বর্তমানে ২৪’শ থেকে ২৮’শ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। আমার বেশ কিছু পাট কেনা আছে, বর্তমান বাজারে বিক্রি করলে আমার অনেক টাকা লোকসান হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত পাট কেনা শুরু হয়নি, তাই হয় তো পাটের দাম কমে গেছে, সরকার পাট কেনা শুরু করলে দাম বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করছি।
শ্রীপুর উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, প্রতিটা মাঠেই পর্যাপ্ত পানি থাকায় পাট পঁচানোর জন্য কৃষকদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে পাট কাটা শেষ পর্যায়ে। তবে শ্রমিকের দাম বেশি এবং মাঠ থেকে পাট বহনের খরচ বেশি হওয়ার সমস্যায় পড়ছে কৃষকেরা। গত সপ্তাহে পাটের দাম প্রতি মন ২৪’শ টাকা থেকে ২৮’শ বর্তমান বাজারও একই রয়েছে। পাটের মন ৩৫’শ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবেন।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সালমা জাহান নিপা বলেন, প্রায় প্রতিবছরই পাট চাষে লোকসান হওয়ায় কৃষি অফিসের মাধ্যমে বিকল্প চাষে আগ্রহ বাড়াতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা কৃষকদের তিল, গ্রীষ্মকালীন ভূট্টা ও বিনা-১৯ ও বিনা ব্রি-৯৮ আউশ জাতের ধান চাষে পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি কৃষক বিকল্প চাষে লাভবান হবেন।