Post Views:
২১০
ফেরদৌস আহমেদ, সাতক্ষীরা:
গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বারান্দায় প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতের ঘটনাটি বেশ আলোচনায় এসেছে । জখমীর নাম শুকুর আলী সরদার (৪২)। তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার খানপুর ইছাকুড় গ্রামের হোসেন আলী সরদারের ছেলে।
আদালত চত্বরে শুকুর আলী জানিয়েছিলেন, গত ৫ মার্চ কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামের আখেরুল ইসলাম ওরফে আজাহারুল ইসলামের কাছ থেকে খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে ৬৭ শতক জমি ক্রয় করেন তিনি। বর্তমানে ওই জমিতে তার ঘরবাড়িও রয়েছে। ওই জমির অর্ধেক নিজের দাবি করে কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা গ্রামের আসাদুল গাজীর ছেলে আবু সাঈদ সোহেল জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ মে আবু সাঈদ সোহেল তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন ১০৩৯/২৩ নং মামলা দায়ের করেন। পুলিশ পরদিন উভয়পক্ষকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নোটিশও জারি করেন। একইভাবে আবু সাঈদ সোহেল গত ২১ মে ওই জমি থেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়া ও জমিতে বিবাদীপক্ষের না যাওয়া সংক্রান্ত একটি আদেশ একই আদালত থেকে অনুমোদন করান। আদালতের বারান্দায় শুকুর আলীর পিঠে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যান বলেও জানিয়েছিলেন শুকুর আলী।
প্রকৃতপক্ষে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় যে, শ্যামনগর উপজেলার ১ নং ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামায়াত নেতা, মামলাবাজ শুকুর আলী নাসকতা ও হত্যা মামলা সহ একাধিক মামলার আসামী। উল্লেখযোগ্য বেশকিছু মামলার মধ্যে, জি আর নং-২১০/১৮,জি আর নং-২২৩/১৮,জি আর নং-২৩২/১৮,জি আর নং-১৬০/১৮,জি আর নং-২০৪/১৮ সহ একাধিক মামলা তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা আদালতে চলমান রয়েছে। বেদখলি জমি গুলাতে শুকুর আলী তার বোনদেরকে রাতারাতি অস্থায়ী বাস স্থান করে দিয়ে দখল নিয়ে বসে এবং প্রকৃত মালিককে ঐ জমিতে ঢুকতে দেওয়া হয় না। জমিতে ঢুকতে গেলে শুকুর আলীর বোনেরা ও তার পোষ্য ক্যাডার বাহিনীরা তেড়ে আসেন মারতে । এর পরেও তো আছে আরো হামলা মামলার ভয় । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধি ব্যাক্তিরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন ।
১৯২ নং দলিলের ২৪/৪/৭২ তারিখ হতে কাজী আসাদুল ইসলাম ক্রয় সূত্রে মৌজা ইছাকুড়, শ্যমনগর, জে এল নং- ৯ সাবেক ১৯৬ ও ১৯৯ নং এস এ খতিয়ানের ৫১ দাগের ১.১৭ একর সম্পত্তির মধ্যে ৮৪ শতক ক্রয় সূত্রে ভোগ দখলে আছে। ১০/৯/১৯৭৫ তারিখে ১৪.৫৫৪ নং দলিলের একই দাগ খতিয়ান থেকে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করে ১০+৮৪ = ৯৪ শতাংশ জমি শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখলে আছে । কিন্তু শুকুর আলী এই জমি আখেরুল ইসলামের নিকট থেকে ১০/৯/৭৫ তারিখের একটি ১০৫৫ নং দলিলে এস এ ১৮৪ ও ১৪৬ খতিয়ানে ৫১ দাগে ১০ শতাংশ ও ৫২ দাগে ৫৭ শতাংশ একটি ভ্রমাত্মক দলিল হতে ২৪/৪/২৩ তারিখে ১১৪৬/২৩ একই খতিয়ানে ৫১ দাগ হতে ১০ শতাংশ ৫২ দাগ হতে ৫৭ শতকের মধ্যে ২৩ শতক মোট ৩৩ শতাংশ বেদখলি জমি জাল জালিয়াতি ও ভূয়া দলিলের মাধ্যমে ৩০/১/২৩ তারিখে সাতক্ষীরা জজ আদালতে বিষয়টি পিটিশন ০২/২৩ নং মোকদ্দমায় দাতা কাজী আখেরুল ইসলাম ও শুকুর আলী । শ্যামনগর উপজেলার এসিল্যান্ড,সাব রেজিষ্টার,রেজিষ্টা ভুরুলিয়া ভূমি অফিসের নায়েব গনদের আমলে দিয়ে দুর্নিতি দমন কমিশন (দুদক) ২০০৭ এর ১৩ (৩) বিধি মোতাবেক শুকুর আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত ভার অর্পন করেন।
পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জায়গাটির বর্তমান মালিক আবু সাঈদ সোহেল, শুকুর আলীর পাতানো সাতক্ষীরা কোর্ট চত্বরের ঘটনার মিথ্যা মামলায় ফেঁসে ফেরারী হয়ে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে ন্যায় বিচারের আশায়
অন্যদিকে আবু সাঈদ সোহেল বলেন, পৈত্রিক ডিএস এসে সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে দীর্ঘ ৫২ বছর ভোগ দখল করে আসছি কতিপয় জামাত নেতা শুকর আলী ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে আদালতের আদেশ কে অমান্য করে রাতের আঁধারে তার ভূমিদস্য বাহিনী দিয়ে আমার জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করে, শুধু তাই নয় ৪৫ ধারা অমান্য করে আমার জমিতে একটি একটি ঘর নির্মাণ করে। আমি তাৎক্ষণিক শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ কে অবগত করি তিনি সব কিছু যেনে বুঝেও সঠিক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং জামাত নেতার পক্ষ নিয়েছেন।
আমি ন্যায় বিচার পাইনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে একাধিক নাশকতার মামলা ও মার্ডার মামলার আসামী জামাত নেতা শুকুর আলী।
এবিষয়ে শ্যামনগর উপজেলার ১ নং ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম কিন্তু সমস্যা সমাধান করতে পারিনি, তিনি আরও বলেন যেখানে আদালতের ৪৫ ধারার আদেশ আছে সেখানে কোন পক্ষকে ঘর তৈরি করার সুযোগ নেই যদি কেউ আদালতের আদেশ অমান্য করে তার দ্বায় ভার তাকেও নিতে হবে।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিষয় টি শুনেছি এবং একজন অফিসার কে পাঠিয়ে ছিলাম তিনি জমিতে গিয়েছিলেন এবং উভায় পক্ষ কে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বলা হয়েছে। অপর প্রশ্নের জামাত নেতা শুকুর আলীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে আপনার থানায় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তার নামে মামলা আছে কিনা আমি জানিনা।