শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি বগুড়ার শেরপুরে সড়ক মেরামত কাজে তিন নম্বর ইট-খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানালেও তারা যেন দেখেও দেখছেন না। ফলে অনেকটা নির্বিঘেœই ওইসব নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক মেরামত কাজ করে যাচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে প্রচÐ ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাদের দাবি, নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারে নির্মাণ করা সড়কটি দ্রæততই ভেঙে যাবে। সেইসঙ্গে আসন্ন বর্ষা মৌসুমেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের জোরগাছা-চৌকিবাড়ী সংযোগ সড়কের আড়াই কিলোমিটার (২৫০০ফুট) মেরামত কাজের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। সে অনুযায়ী একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেন। তবে সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে বগুড়ার রাকিব ট্রেডার্সকে কাজটি দেওয়া হয়। এই কাজে সরকারি বরাদ্দ ৮৪ লাখ টাকা। আগামি ৩০জুনের মধ্যে ওই কাজটি শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী বিগত জানুয়ারী মাসের শুরু থেকেই সড়কটি মেরামত কাজ শুরু করেছেন ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সত্ত¡াধিকারী আলমগীর হোসেন। কিন্তু এরইমধ্যে এই সড়ক মেরামত কাজ নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (০৯মার্চ) দুপুরে সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে জয়নগর গ্রামের ভোলা মিয়া, মোজাম্মেল হক, ফিরোজ আহম্মেদসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, সড়কটি মেরামতে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি তিন নম্বর ইট-খোয়া দিয়ে এই কাজটি করছেন। তাই এখনই সড়কে বিছানো খোয়াগুলো রোলারের চাকায় ভেঙে মাটি হয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে মিশে যাচ্ছে মাটি-বালির সঙ্গে। এভাবে কাজ করা হলে দ্রæতই সড়কটি নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের শঙ্কা, আসন্ন বর্ষা মৌসুমেই সড়কের কার্পেটিং উঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
স্থানীয় গুয়াগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুলতান আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে ওই ঠিকাদার নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজটি করছেন। তাই বিষয়টি তাদেরকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। বরং আরও বেশি নি¤œমানের ইট-খোয়া দিয়ে সড়ক নির্মাণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন ওই ঠিকাদার। যা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ঠিকাদার আলমগীর হোসেন নিজেই বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নির্মাণ কাজের প্রথমের দিকে স্থানীয় একজন সাপ্লাইয়ার ভালো ইট ও খোয়া দেখিয়ে ওইসব নি¤œমানের ইট-খোয়া সরবরাহ করেছে। যা দিয়ে কিছু নির্মাণ কাজও করা হয়েছে। সেসময়ে আমি খুবই অসুস্থ ছিলাম। তাই আমার পক্ষে ঠিকভাবে খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে আমি সুস্থ হয়ে কাজের তদারকি করছি। তাই এখন আর কোনো সমস্যা হবে না। ভালো ইট কিনে নিজেই খোয়া তৈরী করে সড়কটির বাকি কাজ সম্পন্ন করবেন বলে দাবি করেন ঠিকাদার আলমগীর হোসেন।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, সড়ক নির্মাণ কাজে তিন নম্বর ইট-খোয়া ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। তাই ওই সড়ক মেরামত কাজে ব্যবহৃত নি¤œমানের ইট-খোয়া সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ভালো ইট-খোয়া দিয়ে এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটি করা না হলে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া তার দপ্তরের কোনো কর্মকর্তা ‘ম্যানেজ’ হওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।