ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দিয়েছে—যতই পরাক্রমশালী হও, ক্ষমতার অপব্যবহার তোমাকে সিংহাসন থেকে একসময় টেনে নামাবে সেই জনতা, যাদের নামে তুমি সিংহাসন দখল করেছ। এই পতন হবে দ্রুত, তুমি সামলে নেওয়ার আগেই। রেজা শাহ, ফার্দিনান্দ মার্কোস বা শেখ হাসিনা—প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই ক্ষমতার গতিপথ এবং তার ঊর্ধ্ব ও নিম্নরেখা, কার্যত অভিন্ন। তাঁদের হাতে রাষ্ট্র, সরকার ও নেতা হয়ে পড়েন এক ও অভিন্ন। তাঁরা কেবল সব ক্ষমতার কেন্দ্রই নন, সব ক্ষমতার উৎসও বটে। একনায়কদের পতনের এটাই মূল কারণ। নেতা হয়ে ওঠেন সেই অক্ষ, যার চারদিকে সবকিছু ঘোরে। ফলে যখন সেই অক্ষ বিপদে পড়ে, তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসার আর কেউ থাকে না।
শেখ হাসিনার কথা ভাবুন। এমন বিপুল ক্ষমতাধর মানুষ, অথচ বিপদ যখন ঘরের দোরগোড়ায়, তাঁর পাশে কেউ নেই। এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে যে সামরিক বাহিনীর ওপর ছিল তাঁর পুরো নিয়ন্ত্রণ, বিপদের সময় তাঁরাও উধাও।
ক্ষমতাধরেরা শুধু নিষ্ঠুর শক্তির জোরেই ক্ষমতা আঁকড়ে থাকেন না, তাঁকে টিকে থাকতে একটি চমৎকার গল্প ফাঁদতে হয়। বাংলাদেশের হাসিনা, ইরানের শাহ, মিসরের হোসনি মোবারক অথবা রোমানিয়ার চসেস্কু—তাঁরা প্রত্যেকেই দেশের জন্য অপরিহার্য হিসেবে নিজেদের উপস্থিত করেছিলেন। নিজেকেই বাংলাদেশের সবকিছুর নিয়ন্তা ভাবতে শুরু করেছিলেন। ‘আমি না থাকলে বন্যায় ভেসে যাবে দেশ’ বলেছিলেন মার্কোস। হোসনি মোবারক মিসরের পরাক্রমশালী একনায়ক। পদত্যাগের দাবির কথায় বলেছিলেন, ‘আমি চলে গেলে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে মিসর।’

