শুদ্ধাচার চর্চায় গোপালগঞ্জ এলজিইডিতে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও টেকসই উন্নয়ন

শুদ্ধাচার চর্চায় গোপালগঞ্জ এলজিইডিতে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও টেকসই উন্নয়ন

শুদ্ধাচার চর্চায় গোপালগঞ্জ এলজিইডিতে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও টেকসই উন্নয়ন

মনোজ সাহা,গোপালগঞ্জ
শুদ্ধাচার চর্চায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গোপালগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে স্বচ্ছতা ও জবাব দিহিতা নিশ্চিত হয়েছে। ওই কার্যালয়ের নিবিড় তত্ত¡াবধানে জেলার রাস্তা, ব্রিজ, কালভাট সহ অবকাঠামোর কাজ মান সম্পন্ন ও টেকসই হচ্ছে। ওই দপ্তরে কর্ম বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অফিসের সব ফ্লোর লাইট সহ আধুনিক উপকরণ দিয়ে সর্জিত করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা আলাদা ডেক্স করে দেয়া হয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে জেলার বিভিন্ন কর্মকান্ডের ছবি টাঙ্গানো হয়েছে। সব ফ্লোরে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য করা হয়েছে ওয়েটিং রুম। তাদের চা-কফি ও পানি দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে। এই দপ্তরের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মীদের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তারা মনোরম পরিবেশে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে সেবা গ্রহীতাদের সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছেন।


শুদ্ধাচার চর্চা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করায় ওই দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এহসানুল হক এলজিইডির শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ২০২০ সালের শুরুতে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এহসানুল হক গোপালগঞ্জ যোগদান করেন। তারপর মার্চ থেকে করোনা মহামারি শুরু হয়। করোনার মধ্যে তিনি জেলার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ৫টি তদারকি টিম গঠন করেন। এরমধ্যে টেকিনিক্যাল টিম সহ সকল টিম কঠোরভাবে কাজের মান নিয়ন্ত্রণ করে। তারা নি¤œমানের কোন সামগ্রী ব্যবহার করতে দেয়নি। এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী নিজে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ তদারকি করেছেন। কোথাও কোন সমস্যা হলে ঠিকাদারকে তাৎক্ষনিক সমাধান দিয়েছে। এ কারণে গত ২ বছরে জেলায় এলজিইজির ৬ শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। নতুন সব প্রকল্পের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।
গোপালগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক রবীন্দ্র নাথ অধিকারী বলেন, শুদ্ধাচার বলতে নৈতিকতা ও সততার দ্বারা প্রভাবিত আচরণ ও উৎকর্ষতাকে বোঝায়। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শুদ্ধাচার একটি অন্যতম কৌশল। এটি চর্চা করে গোপালগঞ্জ এলজিইডি স্বচ্ছতা,জবাব দিহিতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। এটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে আন্যান্য দপ্তর গ্রহন করলে দেশ সুশাসনের পথে এগিয়ে যাবে।
এলজিইডির তালিকা ভূক্ত ঠিকাদার নূর মোহাম্মদ সিকদার নূরু বলেন, এলজিইডেতে কাজ করে শান্তি আছে। নির্বাহী প্রকৌশলী শতভাগ কাজ বুঝে নেন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি কোন প্রকার ছাড় দেন না। তিনি কোন ধরণের নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করতে দেন না। এ কারণে এলজিইডির কাজের মান বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের কথা বলছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী টেকসই উন্নয়ন করছেন। অফিসে শুদ্ধাচার চর্চা হচ্ছে। এ কারণে অফিসে কোন ফাইল পড়ে থাকে না। কাজের বিলের জন্য কোন দীর্ঘ সূত্রিতা নেই। তাৎক্ষনিক ভাবে বিল পাওয়া যায়। এভাবে সহজে বিল পাই। তাই এই দপ্তরে কাজ করতে উৎসাহ বোধ করি।
বরিশালের রূপালী কনস্ট্রাকশনের সত্ত¡াধিকারী ঠিকাদার মোঃ ফারুক হোসেন মিয়া বলেন, আমি দেশের প্রায় সব জেলায় কাজ করি। সেখানকার কাজের মান মোটমুটি স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু গোপালগঞ্জ এলজিইডির কাজ শতভাগ মান সম্পন্ন করে দিতে হয়। তাই এখানকার কাজ টেকসই। এটি বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী নিশ্চিত করেছেন। তাই এখানে এলজিইজির রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, প্রাথমিক বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু দারিদ্র বিমোচন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, ঈদগাঁহ, শশ্মান, মাদ্রাসা, মন্দির সহ সব কাজ মান সম্পন্ন হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য এলজিইডির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।


গোপালগঞ্জ চেম্বার ও কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, এলজিইডি গোপালগঞ্জের সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করছে। এখানে শুদ্ধাচার চর্চা হচ্ছে। এ কারণে এ দপ্তরের কাজ মান বেড়েছে। টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে। গোপালগঞ্জ জেলার মানুষ যোগাগের ক্ষেত্রে এর সুফল পাচ্ছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় জেলার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। অন্যান্য দপ্তর এলজিইডির মতো শুদ্ধাচার চর্চা শুরু করলে গোপালগঞ্জে সব ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
গোপালগঞ্জ এলজিইডি’র সমাজ বিজ্ঞানী মোঃ এমরানুল হক বলেন, এখানে আমাদের কাজের অনুকূল পরিবেশ সৃস্টি করা হয়েছে। মনোরম পরিবেশে আমরা কাজ করি। এখানে কর্মরত সবার সাথে পরস্পর সু-সম্পর্ক রয়েছে। আমরা কোন কাজ ফেলে রাখি না। সব ক্ষেত্রেই আমরা আন্তরিকতার সাখে সেবা দিয়ে থাকি। শুদ্ধাচার চর্চা হয়। তাই আমাদের দপ্তরটি গতিশীল দপ্তর। এখানে স্বচ্ছতা ও জাবাব দিহিতা রয়েছে। কাজে ফাঁকি দেয়ার কোন সুযোগ নেই।


টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের সুখময় বাইন (৬০) বলেন, এখানে এলজিইডি পরিকল্পিত ভাবে সব কাজ করছে। এজন্য তাদের কাজ সুন্দর হচ্ছে। এলজিইডির প্রকৌশলীরা নিয়মিত কাজের তদারকি করছেন। ঠিকাদারকে নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না। এ কারণে কাজের মান ভাল হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর গ্রামের নাজির হোসেন (৫০) বলেন, এলজিইডির কাজের মান আগে খারাপ ছিলো। এখন এলজিইডি শতভাগ কাজ সঠিক ভাবে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বুঝে নিচ্ছে। এ কারণে এলজিইডির কাজের মান বেড়েছে। কাজগুলো টেকসই হচ্ছে। টেকসই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এতে আমরা উপকৃত হচ্ছি। রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় কমছে।


গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এহসানুল হক বলেন, এখানে সেবা গ্রহীতা, ঠিকাদার, অফিসের প্রতিটি কর্মী ও দর্শনার্থীদের সমান চোখে দেখা হয়। সবার কথা ধৈর্যের সাথে শুনে সমাধান দেয়া হয়। শুদ্ধাচার চর্চার মাধ্যমে অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ দ্রæত নিস্পত্তি করা হয়। অফিসের কর্মীরাও আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন। এ কারণে এখানে এসে সেবা গ্রহীতারা সন্তুষ্ট হন। এখানে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মান নিয়ন্ত্রণকারী টিমের সদস্যরা সব সময় কাজের তদারকি করেন। কাজের মানের ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া হয় না। তাই এখানে টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে। এসব কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ আমি ২০২০-২০২১ সালে শুদ্ধার পুরস্কার পেয়েছি। এ পুরস্কার পওয়ার পর আমাদের দপ্তরের কাজের উৎসাহ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে কাজ করতে পারলে গোপালগঞ্জের উন্নয়ন তরান্বিত হবে। পাশাপাশি এটিকে রোল মডেল হিসেবে সারাদেশের প্রকৌশল বিভাগ গ্রহন করতে পারে। #

 

 

এ জাতীয় আরো খবর..

Explore More Districts