নড়াইল সদর উপজেলার মাগুরা কালুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম-এর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শিশুটির পরিবার শিক্ষককে একমাত্র অভিযুক্ত করে থানায় ধর্ষণচেষ্টার মামলা দায়ের করেছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাতে নড়াইল সদর থানা পুলিশ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অভিযুক্ত মো. তরিকুল ইসলাম ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টিতে যোগদান করেন এবং চলতি বছরের আগস্ট থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। জানা গেছে, তিনি নড়াইল সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের মৃত ময়নউদ্দিন মাস্টারের ছেলে।
“নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য জানান, অভিযুক্ত মাগুরা কালুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) মো: তরিকুল ইসলাম মাইজপাড়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মো: সাদিকুর রহমানের শ্যালক এবং তিনিও ওই ইউনিয়নের রোকন এর দায়িত্বে রয়েছেন।”
ঘটনার বিবরণ:
পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৫ অক্টোবর বিকেলে স্কুল ছুটির পর তরিকুল ইসলাম চারজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন। এক ছাত্রী বাইরে গেলে, তিনি বাকি দুই শিক্ষার্থীকে জাতীয় পতাকা খুলতে পাঠান এবং সেই সুযোগে একা থাকা ছাত্রীটিকে রুমে আটকে অনৈতিকভাবে স্পর্শ করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
ছাত্রীটির চিৎকারে সহপাঠীরা ছুটে এলে শিক্ষক দ্রুত তাকে ছেড়ে দেন। পরে ঘটনাটি গোপন রাখতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেন তিনি।
তবে ভয়ে নীরব থাকা পরিবার তিনদিন পর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আনলে, স্থানীয়ভাবে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলে। অবশেষে ২১ অক্টোবর রাতে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এরপর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক গা ঢাকা দিয়েছেন।
অভিভাবকদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ:
এ ঘটনায় এলাকায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগে রয়েছেন। শিশুরা নিজেরাই প্রতিবাদে পথে নেমে “শিশুর নিরাপত্তা চাই” লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতীকী আন্দোলন করেছে।
একজন অভিভাবক বলেন, “আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষকদের হাতে নিরাপদ ভাবতাম। এখন বুঝতে পারছি, স্কুলও আর নিরাপদ নয়।”
অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। অভিযোগগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট।”
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “এ ধরনের ঘটনা শুধু এক শিশুর মর্যাদাকে নয়, বরং রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্কুল পর্যায়ে কঠোর নজরদারি ও মনিটরিং ব্যবস্থা থাকা জরুরি।”
শিশু অধিকার সংস্থার এক স্থানীয় প্রতিনিধি বলেন, “প্রতিটি স্কুলে শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশায় থাকা কেউ যদি এ ধরনের অপরাধে জড়িত হন, তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।”
মানবাধিকার এঙ্গেল (Editorial Note):
শিক্ষক সমাজ জাতি গঠনের মূল কারিগর। অথচ একজন শিক্ষক যখন শিশু নির্যাতনের অভিযুক্ত হন, তখন তা শুধু একজন শিক্ষার্থীর নয়—সমগ্র সমাজের জন্য এক ভয়াবহ বার্তা দেয়। এই ঘটনা দেখিয়ে দেয়, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ও সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে জবাবদিহিতা ও নৈতিক মূল্যবোধ পুনর্গঠন করা জরুরি।