শিক্ষার্থী আজমানের আত্নহত্যা: অভিযোগের তীর স্কলার্সহোমের দিকে

শিক্ষার্থী আজমানের আত্নহত্যা: অভিযোগের তীর স্কলার্সহোমের দিকে

শিক্ষার্থী আজমানের আত্নহত্যা: অভিযোগের তীর স্কলার্সহোমের দিকে

সিলেটের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোম’র শিক্ষার্থী আজমান আহমেদ দানিয়াল (১৯) এর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে পর আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোমের বিরুদ্ধে।

স্বজনদের অভিযোগ, এইচএসসি‘র প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষায় দানিয়ালের রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় তার বাবা- মাকে ডেকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল অপমান করেন। আর এই অপমানের ক্ষোভ থেকেই সে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি তাদের।

এদিকে, দানিয়ালের মৃত্যুর পর গণমাধ্যমে তার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা আগের দিন গেছি। ভাইস প্রিন্সিপালে আমারে দূর দূর ছে ছে করছইন। কইছইন- তারে (আজমানকে) ঘুম পাতাইয়া থইতাম। সে কলেজে যায় না কেনে? কোন মা-বাপে কিতা ইচ্ছা করি স্কুল দেয় নানি? বাচ্চারে কিতা ঘুম পাতাইয়া রাখার লাগি স্কুলে দিছিনি?’

তিনি বলেন, ‘আমি গেছি একদিন, আমার হাজবেন্ড গেছইন একদিন। আরেকদিন আমরা একলগে গেছি। স্কলার্সহোম কোন সায় দেয়নি। ঠিক আছে, আমরা টিসি মানিয়া নিলাম। তারপরও তোমরা আমার পুয়ারে ইলা বেইজ্জত করলায় কেনে?’ এবং ‘জানি আমার পুয়া দুর্বল। কিন্তু আমরা পুয়ারে বকা দেইনি। টিসি দেওয়ায় ক্লাসিক কলেজে গিয়া কালকে মাতিয়া আইছে’।

কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘আমার পুয়ায় কেনে ইতা করলো, কিতা কইছে তারা (স্কলার্সহোম) ? কিতা কইছে? ঠিক আছে, আমার পুয়া পড়াত দুর্বল, কিন্তু তারা কেনো এতো বেইজ্জত করলো। আমার সামনে বেইজ্জত করলো’।

জানা যায়, দানিয়াল স্কলার্সহোম শাহী ঈদগাহ শাখায় ৬ষ্ট শ্রেণি থেকে পড়াশোনা করছে। সে গত এইচএসসি‘র প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষায় ৫ বিষয়ে ফেল করেছে। পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, এরপর তার মা-বাবাকে প্রতিষ্ঠানে ডেকে নিয়ে ছেলেকে টিসি দিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয় এবং ছেলের খারাপ রেজাল্টের জন্য তাদের অপমান করা হয়।

তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন স্কলার্সহোম’র শাহী ঈদগাহ শাখার অধ্যক্ষ লে. কর্ণেল (অব.) মুনীর আহমেদ কাদেরী। তিনি বলেন, কোনো অভিভাবক কে অপমান বা হেনস্তা আমরা করিনি তবে আমরা তাদের সন্তানদের রেজাল্টের বিষয়ে অবগত করি। সে গত প্রি-টেস্ট পরিক্ষার আগের দুই পরীক্ষায়ও ৪/৫ বিষয়ে ফেল করেছে। তারপর তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দেই। এখানেও সে ঐচ্ছিক বিষয় সহ ৫ বিষয়ে ফেল করে। তারপর তার অভিভাবক কে জানানো হলে তারা এসে ভাইস-প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করে গেছেন। এরপর থেকে সে আর আমাদের প্রতিষ্ঠানে আসেনি।

তিনি আরও বলেন, এই শিক্ষার্থী যেদিন আত্নহত্যা করে এর ৪/৫দিন পূর্বে সে আমাদের ক্যাম্পাসে এসেছিল। আমি যতটুকু জানি যেদিন সে আত্নহত্যা করে সেদিন নাকি একটি কলেজে গিয়েছিল ভর্তির জন্য সেখান থেকে ফিরে মায়ের সাথে কথা বলে সে ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তার আত্নহত্যার খবর শুনে আমরা বাসায় গিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, অনেক শিক্ষার্থীরা পরিক্ষা শেষে তাদের রেজাল্ট অভিভাবকদের জানাতে চায় না । তাই যারা খারাপ করে আমরাই তাদের অভিভাবকদের জানাই এটা তাদের জানা উচিত।

এবিষয়ে সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে একাধিক বার কল করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে, দানিয়ালের মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানের সাবেক অনেক শিক্ষার্থী ও তার সহপাঠীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় তুলেছেন। তার সহপাঠীরা এই মৃত্যুর ঘটনায় আজ (২১ সেপ্টেম্বর) রোববার স্কলার্সহোমে বিক্ষোভ করবেন বলে জানা গেছে। এরই প্রেক্ষিতে তার মৃত্যুর ৩দিন পর শোক প্রকাশ করেছে স্কলার্সহোম কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) স্কলার্সহোম শাহী ঈদগাহ শাখার অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মুনীর আহমেদ কাদেরী (অব.) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আজমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে রোববার স্কলার্সহোমের শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসের সব ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে তার সহপাঠীদের ধারণা, বিক্ষোভ এড়াতে আজ স্কলার্সহোম বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

Explore More Districts