শিক্ষক দম্পতির ছেলের আহাজারি:‘ আমি একা হইয়্যা গেলাম’ – Daily Gazipur Online

শিক্ষক দম্পতির ছেলের আহাজারি:‘ আমি একা হইয়্যা গেলাম’ – Daily Gazipur Online

ডেইলি গাজীপুর প্রতিবেদক:‘ আমি একা হইয়্যা গেলাম’সবাই আমারে ছাইড়্যা চইল্যা গেছে। মো. মেরাজের আপনজন হারানোর যন্ত্রণাটা শুরু হয় ১৪ বছর বয়সে। তখন তিনি সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। একদিন হঠাৎ করেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মা। ছেলের কথা ভেবে দ্বিতীয় বিয়ে করেন বাবা। সেই মা আর বাবাকে নিয়ে শুরু হয় মেরাজের নতুন পৃথিবী। এখন তাঁর বয়স ২৩ বছর। ৯ বছরের ব্যবধানে আবারও তাঁর জীবনে নেমে এল শোকের ছায়া। এবার এক দিনে মা-বাবা দুজনকে হারালেন।
মেরাজরা থাকতেন গাজীপুরের কামারজুরি এলাকায়। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের খাইলকৈর বগারটেক এলাকায় প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে মেরাজের বাবা এ কে এম জিয়াউর রহমান ও সৎমা মাহমুদা আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কীভাবে এ দম্পতির মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। জিয়াউর-মাহমুদা দম্পতির একমাত্র সন্তান মেরাজ। তিনি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে আজ সকাল থেকেই জিয়াউরের বাড়িতে জড়ো হতে থাকেন প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন। দুপুরে জিয়াউরের বাড়িতে গিয়ে মানুষের ভিড় দেখা যায়। কেউ ঘরের বিছানায়, কেউ মেঝেতে, কেউবা সোফায় বসে বিলাপ করছিলেন।
ভিড়ের মধ্যে একটি চেয়ারে বসেছিলেন মেরাজ। তাঁর চারপাশ ঘিরে আছেন স্বজন-প্রতিবেশীরা। তাঁদের কেউ কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে মেরাজকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যেই তাঁর মুঠোফোনে একটি কল আসে। মেরাজ ফোনটি ধরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলতে থাকেন, ‘আমার সব শেষ হইয়্যা গেল রে, সব…। আমার আর এই দুনিয়াতে কেউ নাই। সবাই আমারে ছাইড়্যা চইল্যা গেছে। আমি একা হইয়্যা গেলাম।’ একটু পরই চোখের পানি মোছেন। এরপর কিছুটা শান্ত হয়ে কার সঙ্গে যেন তাঁর মা–বাবাকে নিয়ে কথা বলতে থাকেন।
মেরাজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘(বুধবার) সন্ধ্যা ৬টার দিকে আব্বুর লগে কথা হয়। আমি পাস্তা খাইতে চাইছি। বলছে, “পাস্তা নিয়া আসব।” কিন্তু এরপর অনেক সময় পার হয়ে গেলেও আব্বু-আম্মু ফিরতাছিল না। এরপর থেইক্যা যতবার ফোন দিছি, ফোন আর রিসিভ হচ্ছিল না। এরপর ভোররাইতে জানতে পারি, আমার আব্বু-আম্মু কেউ বাঁইচা নাই।’
মা–বাবাকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণা করতে করতে মেরাজ বলেন, তাঁর মা–বাবা দুজনই খুব ভালো ছিলেন। সবাই তাঁদের পছন্দ করতেন। কোনো শত্রুও ছিল না। কিন্তু তারপরও কে বা কারা এ কাজ করল, তা বুঝতে পারছেন না। তিনি শুধু এর সঠিক বিচারটা চান।
জিয়াউর রহমানরা ছয় ভাই, এক বোন। ভাইদের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তাঁরা ছয় ভাই পরিবার নিয়ে একই জায়গায় থাকেন। তাঁর বাবা বেঁচে নেই। মা জামিলা আক্তার সত্তরোর্ধ্ব। জিয়াউর টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে এবং তাঁর স্ত্রী মাহমুদা চাকরি করতেন একই এলাকার আমজাদ আলী পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে। প্রতিদিন তাঁরা একই সঙ্গে প্রাইভেট কারে যাওয়া–আসা করতেন।

Print Friendly, PDF & Email

Explore More Districts