জুমবাংলা ডেস্ক : এমডি রাশেদুল ইসলাম সুমন আমেরিকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এইচআর পদে চাকরি করেন। জরুরি কাজে তিন সপ্তাহের ছুটিতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গ্রামের বাড়িতে আসেন। ছুটি শেষে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালে আসেন তিনি। এ সময় কাতার এয়ারওয়েজ থেকে তাঁকে জানানো হয় ফ্লাইটের সময় পরিবর্তন হয়ে বিকেল ৫টায় নির্ধারণ করা হয়েছে। সমকালের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
বিমানবন্দরে প্রবাসী যাত্রীদের জন্য নির্মাণ করা বিশ্রামগারে কথা হয় রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, দুপুর দেড়টায় কাতার এয়ারওয়েজ থেকে আবার জানানো হয় কাতারগামী তিনটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এ সময় বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালের প্রবেশ গেটের বাইরে ফ্লাইট বাতিলের বিষয়টি কাগজে লিখে দেয়ালে লাগিয়ে দেওয়া হয়।
দুবার সময় পেছানোয় হতাশ হয়ে রাশেদুল বলেন, আমেরিকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সময়মতো পৌঁছতে না পারলে চাকরির বড় ধরনের সমস্যা হবে। ফ্লাইট ছাড়ার নির্ধারিত সূচিও ঠিকমতো বলতে পারছেন না এয়ারলাইন্স কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় হতাশা নিয়ে বিমানবন্দর থেকে গন্তব্যে কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান তিনি।
এদিকে একই এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্য যাবেন আলী হোসেন। পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইটের সূচি অনুযায়ী গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী থেকে বিমানবন্দরে আসেন তিনি। অনলাইনে এয়ারলাইন্সের বোর্ডিংসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় মালপত্রের লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনাল প্রবেশ গেট দিয়ে বেরিয়ে আসেন। আলী হোসেন বলেন, ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সময়মতো কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।
গতকাল বিমানবন্দর ঘুরে বিভিন্ন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কারণে শত শত যাত্রী সময়মতো গন্তব্যে যেতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। হোটেল না পেয়ে অনেকের রাত কাটে বিমানবন্দরের ফুটপাতে। আবার তাদের কারও হোটেলে থাকার মতো অর্থ ছিল না। ফলে সড়কে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন যাত্রী ও তাঁর স্বজনরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, ফ্লাইট বাতিলের বিষয়টি এয়ারলাইন্স থেকে আগেই জানানোর কথা থাকলেও তাদের জানানো হয়নি। এ অবস্থায় বিভিন্ন জেলার গ্রামাঞ্চল থেকে বিমানবন্দরে এসে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারা।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারছে না। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বেবিচক জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন ও কাতার সাময়িকভাবে তাদের আকাশপথ ব্যবহার সীমিত বা বন্ধ রেখেছে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা থেকে পরিচালিত মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটে। বিশেষ করে শারজাহ, আবুধাবি, দুবাই, দোহা, বাহরাইন ও কুয়েত রুটের যাত্রীবাহী ফ্লাইটগুলোকে নির্ধারিত সময়ের বাইরে বিকল্প রুটে যাত্রা করতে হয়েছে। ফলে অনেক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গেল কয়েক দিনে অনেক ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায়নি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শারজাহ রুটে এয়ার অ্যারাবিয়ার দুটি ফ্লাইট, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের শারজাহগামী একটি, দুবাই রুটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি, কুয়েতগামী ইউএস-বাংলার একটি, কুয়েতের জাজিরা এয়ারওয়েজের দুটি, দোহাগামী কাতার এয়ারওয়েজের দুটি, বাংলাদেশ বিমানের একটি এবং দোহা রুটে ইউএস-বাংলার আরও একটি ফ্লাইট।
এর আগে সোমবার বেবিচক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও বাহরাইন চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচলের জন্য বন্ধ রেখেছে।
পরে জানা যায়, সোমবার রাত ৩টার পর থেকে ওই দেশগুলো তাদের আকাশসীমা আবার উন্মুক্ত করেছে এবং দোহা, দুবাই, আবুধাবি, কুয়েত ও বাহরাইন রুটে সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।