আমেরিকার ইতিহাসে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একটু বিশেষই বলা যায়। কারণ এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট পেয়েছেন মার্কিনীরা। জয়ী রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বয়স এখন ৭৮ বছর। এর আগে জো বাইডেন ৭৭ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
তবে এখনই ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে যেতে পারবেন না। এর জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর মধ্যে তিনি তাঁর প্রশাসন সাজানোয় মন দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কাদেরকে তিনি তাঁর মন্ত্রিসভায় বেছে নিয়েছেন তা দেখে নেওয়া যাক-
স্বাস্থ্য সচিব
সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রার্থী এবং করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সন্দেহবাদী হিসেবে সমালোচিত রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র কে স্বাস্থ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
ভেটেরান্স বিষয়ক সেক্রেটারি
জর্জিয়ার সাবেক কংগ্রেসম্যান ডগ কলিন্সকে প্রবীণদের সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা ও জাতীয় ভেটেরান্স মেমোরিয়াল দেখ ভালের দায়িত্ব দিয়েছেন। এর আগে তিনি মার্কিন বিমান বাহিনীর সঙ্গে ইরাকে কাজ করেছিলেন।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক
২০২০ সালে ডেমোক্র্যাট হিসেবে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাবেক কংগ্রেসওম্যান তুলসি গ্যাবার্ডকে এ পদের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের এই পছন্দ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এমনকি তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির অনেকেই এ নিয়ে চটেছেন।
প্রতিরক্ষা সচিব
সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞ এবং ফক্স নিউজের হোস্ট পিট হেগসেথকে প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম। এর আগে তিনি সামরিক প্রবীণদের নিয়ে কাজ করা দুটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপের সাবেক প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন।
সেক্রেটারি অফ স্টেট
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সিনেটর মার্কো রুবিওকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এর আগে ২০১৬ সালে রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ট্রাম্পের বিরোধিতা করেছিলেন। মার্কো রুবিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলে প্রথম কোনো লাতিনো বংশোদ্ভূত রাজনীতিক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন। রুবিওর জন্ম ফ্লোরিডাতেই। তিনি বিগত বছরগুলোতে চীন, ইরান, কিউবাসহ যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি সম্মান রেখেই শক্তিশালী মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে কথা বলেছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল
রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ম্যাট গেটজ-কে (৪২) অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দেশটির শীর্ষ প্রসিকিউটর ও বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে এ নিয়ে কিছু সিনেট রিপাবলিকান ইতিমধ্যেই তার মনোনয়নের বিরোধিতার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
ফ্লোরিডার কংগ্রেসম্যান মাইক ওয়াল্টজ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি ইউএস আর্মি এবং ন্যাশনাল গার্ডে ২৭ বছর কর্মরত ছিলেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি
সাউথ ডাকোটা রাজ্যের গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ দায়িত্ব পেলে তিনি সন্ত্রাসবিরোধী, সীমান্ত নিরাপত্তা, অভিবাসন ও কাস্টমস, সাইবার নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধান করবেন।
বর্ডার জার
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এর সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টম হোম্যানকে এ দায়ত্ব দেওয়া হয়েছে।
সরকারী দক্ষতা বিভাগ
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতাতে নির্বাচনী প্রচারণায় বিপুল পরিমাণের অর্থ খরচ করেছেন মার্কিন ধনকুবের ও বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। তাঁকে জেতাতে ট্রাম্পের সঙ্গে শুরু থেকেই ছিলেন প্রচারণায়। তাঁর এমন সমর্থন ব্যর্থ হয়নি। দেশটির মসনদে এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মাস্কের এমন সমর্থনের প্রতিদান দিতে ভোলেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি” বা ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগের’ নেতৃত্ব দেবেন ইলন মাস্ক। তাঁর সঙ্গে আরও থাকবেন সাবেক রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি প্রার্থী বিবেক রামাস্বামী। যা, ‘সেইভ আমেরিকা’ উদ্যোগের জন্য অপরিহার্য।”
চিফ অফ স্টাফ
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর হোয়াইট হাউজের চিফ অফ স্টাফ হিসেবে সুসি ওয়াইলসকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। এটিই এবারে ৪৭তম প্রেসিডন্টের দেয়া প্রথম নিয়োগ।
উল্লেখ্য, এখনো ট্রেজারি, শিক্ষা, পরিবহন এবং আরও অনেক কিছুর সচিবসহ মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া বাকি রয়েছে।