রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধের প্রভাব পড়েছে দেশের আটা-ময়দার বাজারে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দুটির দাম।গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর খুচরাবাজারে এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি আটা, ময়দায় মানভেদে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর এক মাসের ব্যবধানে তা কেজিতে আট টাকা ছাড়িয়েছে। সয়াবিন তেল নিয়ে ভোগান্তির মধ্যেই আটা, ময়দার এই দাম বৃদ্ধিতে শঙ্কিত ভোক্তারা। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, দেশে বছরে ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১১ লাখ টন গম দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি করা হয়। আর আমদানির বড় অংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। বাকিটা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ আটটি দেশ থেকে আমদানি করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে দেশে মোট গম আমদানির ৬৩ শতাংশ, কানাডা থেকে ১৮ শতাংশ ও বাকিটা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ভারত থেকে গম আমদানি বেড়েছে। এই সময়ে মোট গম আমদানির ৪৫ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে, কানাডা থেকে ২৩ শতাংশ, ভারত থেকে ১৭ শতাংশ আমদানি করা হয়। বাকিটা গত অন্য দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। কারণ, এই তিনটি দেশ থেকেই বাংলাদেশ তার গমের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করে থাকে। ফলে দেশের বাজারে দ্রুতই এর প্রভাব পড়েছে।সংসদীয় কমিটির ‘দুস্থ কোটা’ ও হজযাত্রায় বাড়তি খরচসংসদীয় কমিটির ‘দুস্থ কোটা’ ও হজযাত্রায় বাড়তি খরচ
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গতকাল খুচরাবাজারে প্রতি কেজি সাদা আটা ৪০ থেকে ৪৪ টাকা, খোলা ময়দা ৫৮ থেকে ৬০ টাকা ও প্যাকেট ময়দা ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এক দিন আগে তা বাজারে যথাক্রমে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা, ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা ও ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক মাস আগে তা যথাক্রমে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, ৫০ থেকে ৫২ টাকা ও ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারের এ সংস্থাটি জানিয়েছে, এক বছর আগে দেশের বাজারে প্রতি কেজি খোলা আটা ৩০ থেকে ৩২ টাকা, খোলা ময়দা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা ও প্যাকেট ময়দা ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি আটা, ময়দায় ১০ থেকে ২৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও বাজারে দাম বেড়েছে আরও বেশি।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া, ইউক্রেনে হামলার পর দেশ দুটি থেকে আর গম আমদানি করা যায়নি। এরপর দেশের ব্যবসায়ীরা গম আমদানিতে ভারতমুখী হলেও এখন দেশটিও গম আমদানি বন্ধ করেছে। যদিও গতকাল ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে গত রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার কথা বলেছে। তারা জানিয়েছে, গমের যেসব চালান পরীক্ষার জন্য কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ১৩ মে বা এর আগে তাদের কাছে নিবন্ধিত হয়েছে, এ ধরনের চালানগুলো রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করলেও সরকারি পর্যায়ে গম আমদানির বিষয়ে কথা চলছে। এরই মধ্যে ৩ লাখ টন গম আমদানির জন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তিও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে ভারত থেকে গম আমদানির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা চাইলে তা খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে করা হবে।ফের বাড়লো স্বর্ণের দামফের বাড়লো স্বর্ণের দাম
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে গত ১ জুলাই থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মোট ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার টন গম বাংলাদেশ আমদানি করেছে। এর মধ্যে গত ১ মার্চ থেকে ১২ মে পর্যন্ত গম আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার টন। বর্তমানে সরকারের কাছে মজুত আছে ১ লাখ ১২ হাজার টন গম।রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধ হওয়ায় কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করা হবে—এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভারত গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। সরকার আরও পাঁচটি দেশ থেকে গম আমদানির পথ খুঁজছে। ইতিমধ্যে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে গম আমদানির বিষয়ে কথা হয়েছে। এ ছাড়া ভারত আমাদের গম দেবে। তাই গম নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।
