সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানের ভাইগণ নামক টিলায় উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতনামা নারীর লাশের রহস্য উন্মোচন করেছে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর তদন্তে নিহতের পরিচয় শনাক্তের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি স্বামী ফারুক আহমদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ফারুক স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
গত ১৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এয়ারপোর্ট থানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের ভাইগণ টিলার নির্জন ঝোপঝাড় থেকে এক অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহটি ছিল আংশিক পচনধরা অবস্থায়।
নারীর বয়স আনুমানিক ২৫ বছর, পরনে ছিল লাল জমিন ছাপা শাড়ি, হালকা গোলাপি বোরকা ও গলায় হলুদ ওড়না। পাশে পড়ে ছিল একটি লেডিস হ্যান্ডব্যাগ, যার ভিতরে কয়েকটি জামাকাপড় ও একটি মেমোরি কার্ড পাওয়া যায়।
পিবিআই ও সিআইডি কর্তৃক আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেও পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, কারণ আঙুলে পচন ধরেছিল। তবে উদ্ধারকৃত মেমোরি কার্ডে থাকা মোবাইল কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ও কল ডেটা রেকর্ড (সিডিআর) বিশ্লেষণ করে পুলিশ নিহতের পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
নিহত নারী হলেন— সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থানার মওলারপাড় গ্রামের মৃত মাহতাব মিয়ার কন্যা রাবেয়া বেগম।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পুলিশের সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসে নিহতের স্বামী ফারুক আহমদ (পিতা: আব্দুল আজিজ, গ্রাম: রাঙ্গারচর, সুনামগঞ্জ সদর)— যিনি ওমান ফেরত প্রবাসী।
এরপর ১৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে এয়ারপোর্ট থানার একটি আভিযানিক দল দোয়ারাবাজার থানার রাঙ্গারচর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ফারুককে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিকভাবে ফারুক হত্যার কথা অস্বীকার করলেও, পুলিশের উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্তের মুখে সে হত্যার দায় স্বীকার করে।
গ্রেফতারের পর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ফারুক জানায়— ওমান প্রবাসকালীন সময়ে তার স্ত্রী রাবেয়া পূর্বের বিয়ে গোপন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য চলছিল।
১৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ফারুক স্ত্রীকে নিয়ে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারতের কথা বলে সিলেটে আসে। পরে বেড়ানোর কথা বলে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উত্তর-পূর্ব পাশের নির্জন টিলায় নিয়ে যায়। সেখানে বিকেল আনুমানিক চারটার দিকে তার ফুফাতো ভাই আলআমিনের সহায়তায় স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে গলা টিপে হত্যা করে।
ঘটনার পর নিহতের চাচা রিপন মিয়া বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় মামলা দায়ের করেন।
এয়ারপোর্ট থানার মামলা নং–১৭, তারিখ–১৭/১০/২০২৫, ধারা ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়।
পরে ১৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে আসামি ফারুক আহমদকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন,
“তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জটিল একটি হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। গ্রেফতার আসামি হত্যার দায় স্বীকার করেছে এবং তার সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”